মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহায় সাধারণত সামর্থবানরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানির পর পশুর গোস্তের একভাগ বিলি করা হয় হতদরিদ্রদের মাঝে। দিনভর গোস্ত সংগ্রহের পর তা পরিবারের সদস্যদের মুখে তুলে দেন নিম্নআয়ের মানুষ।
এই হত-দরিদ্ররা কোনোদিন পশু কোরবানি দেয়ার স্বপ্নও দেখে না। তাই বলে সাধ পূরণ হবে না? এ জন্য তারা গড়ে তোলেন ‘হতদরিদ্র সমিতি’। নিজেদের আয় থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমিয়ে সেই টাকায় হয় তাদের সাধপূরণ। বছর শেষে জমানো টাকা দিয়ে তারা কেনেন কোরবানির গরু। নিজেরা আনন্দ করে মাংস বণ্টন করে নেয়ার পাশাপাশি সাধ্য অনুযায়ী এলাকার গরিবদেরও দেন সেই আনন্দের ভাগ।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মূল সতাল গ্রামের ১৪ জন হতদরিদ্র মানুষ এভাবেই কোরবানি দিয়ে এলাকায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উল্লেখ্য এদের তিনজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। বাকি প্রত্যেকেই দিনমজুর।
সমিতির সভাপতি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মাহতাব উদ্দিন জানান, পাঁচ বছর সমিতি পরিচালনা করছেন তারা। নিজেদের জমানো টাকায় প্রতিবছরই কোরবানি দেন। এবারও ৭৬ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন। এছাড়াও সমিতির টাকা ছোটখাটো ব্যবসায় খাটানোসহ নিজেদের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে তারা ব্যবহার করেন। এরপরও যদি জমানো টাকা থেকে যায় তাহলে সেই টাকা সদস্যদের ফেরত দেয়া হয়। ঈদের পরদিন থেকে আবারও নতুন করে টাকা জমানো শুরু করেন তারা।
‘যদি থাকে স্বজন তেঁতুল পাতায় নজন।’ উল্লেখ করে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনোদিন চিন্তাও করি নাই নিজের টাকায় কোরবানি দিমু। তেমন সামর্থ্যও নাই। কিন্তু এই ১৪ জন স্বজনের উদ্যোগে আমরা এখন কোরবানি দেই। অহন আর কোরবানির গোস্তের লাইগ্যা অন্যের বাড়িত চাইয়্যা থাহন লাগে না।’
এ বছর কোরবানি দেয়ার পর ১০ হাজার টাকা জমা ছিল। সেই টাকা সদস্যদের মধ্যে ঈদের দিন সকালে ভাগ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান জহিরুল ইসলাম। দেশের অন্যান্য গরিব-অসহায় মানুষ যদি এভাবে সমিতি করে টাকা জমিয়ে কোরবানি দেয় তাহলে তাদেরও আর কোরবানির মাংসের জন্য দুঃখ করতে হবে না বলে মনে করেন তিনি।