ঢাকা অফিস।।
এখন দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এটি সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইল ফলক। বিশেষ করে যশোর ও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২১টি জেলায় খুলছে অর্থনীতির দুয়ার। মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে বিশাল পদ্মার বুকে বিস্ময়কর পদ্মা সেতু। হবে শক্তিশালী জোন। সামগ্রিক চেহারা পাল্টে যাবে। আনবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গোটা অঞ্চলের হাতের নাগালে আসবে রাজধানী। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য, বৈচিত্র ও বাগেরহাটের খানজাহান আলী (রহঃ) মাজার, ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদসহ গুরুত্বপুর্ণ এলাকা ঘিরে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ার পর থেকেই সেতুটির এপার ও ওপারের জমির মূল্য বাড়তে থাকে। স্থাপন হতে থাকে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা। পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যানটি বসানোর পর মুহূর্তে স্বপ্ন যেমন স্পর্শ করলো তেমনি মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত এক সুতোয় গেঁথে গোটা এলাকায় নানামুখী উন্নয়ন ত্বরান্বিত হলো। দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১টি জেলা হলো, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।
এই অঞ্চলে পদ্মা সেতুসহ ছাড়াও কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে যশোর নড়াইল ও ভাটিয়াপাড়া হয়ে ঢাকা সিক্স লেনের এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক, যশোরে শেখ হাসিনা আইটি পার্ক, বাগেরহাটের ফয়লায় বিমান বন্দর, খুলনা-মংলা রেল লাইন, যশোরে দু’টি ইপিজেড, খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, গোটা অঞ্চলে পাইপ লাইনে গ্যাস, দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলা, শিল্পশহর নওয়াপাড়া নদীবন্দর, বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরা ও দর্শনা স্থলবন্দরের উন্নয়ন, বেনাপোল থেকে সরাসরি ঢাকা ট্রেন যোগাযোগসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড কোনটি শেষ হয়েছে কোনটি চলছে। এককথায় উন্নয়নের হাওয়া চলছে। এমন এক পরিস্থিতিতে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নতুন দিগন্তের উম্মোচন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দ্রæত ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। যা কয়েকবছর আগে কল্পনাও করা যেত না। অর্থনীতি বিশারদদের কথা, যেভাবে উন্নয়ন ঘটছে তা অব্যাহত থাকলে সামগ্রিক অর্থনীতির বিশাল পরিবর্তন ঘটবে।
পরিবহন ও যোগাযোগের উন্নতি জাতীয় উন্নয়নের প্রভাবক। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সামগ্রিক অর্থনীতির নিয়ামক হলো পরিবহন ও যোগাযোগ। এ প্রসঙ্গে যশোর সরকারি এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর মো. নাসিম রেজা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গোটা অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠছে। বাড়ছে বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এটি শুধু এই অঞ্চলের জন্য নয়, সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইলফলক।
সূত্রমতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষ শুধু নয়, দেশের বৃহত্তম প্রকল্পে উত্তরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া উপকুল এবং দক্ষিণে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জাজিরা উপকুলের বিরাট এলাকার মানুষ সার্বিক দিক দিয়ে সুবিধা ও উপকারভোগী হচ্ছেন। পদ্মা সেতুকে ঘিরে জমিজমার মূল্য বেড়ে গেছে। বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা ও অত্যাধুনিক আবাসিক এলাকা স্থাপন হচ্ছে। ঢাকার বাইরে পদ্মা সেতুর আশেপাশের এলাকায় গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্টানের প্রসার ঘটার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, খুলনা-মংলা রেললাইন স্থাপনসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রেলের উন্নয়নে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়া দেশের বৃৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে যশোর, নড়াইল ও ভাটিয়াপাড়া ছুঁয়ে এশিয়ান হাইওয়ের স্ত্সি লেনের সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হচ্ছে প্রায় ৫হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। এসব সড়ক ও পদ্মা সেতুতে হাতের নাগালে আসবে রাজধানী। খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক শেখ আশরাফ উজ জামান ও যশোরের রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা ইকবাল কবীর জাহিদসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের কথা, পদ্মা সেতু, সরাসরি ট্রেন ও সিক্স লেনের সড়ক নির্মাণসহ যোগাযোগে যুগান্তকারী উন্নয়ন এবং সামগ্রিক উন্নয়ন অর্থনীতিতে নতুন এক দিগন্ত উম্মোচিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে মংলা, বেনাপোল, দর্শনা ও ভোমরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতির গতি সৃষ্টি হয়েছে। নদীপথে দেশী ও বিদেশেী পণ্যের আভ্যন্তরীণ রফতানীতে যশোরের শিল্পশহর নওয়াপড়ায় অন্যতম বৃহত্তম নদীবন্দর। যশোরে দু’টি ইপিজেড স্থাপনের তোড়জোড় চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরতলী আরবপুর এলাকায় ৫শ’ একর জমির ওপর অটোমোবাইল শিল্পাঞ্চল ও যশোর-বেনাপোল সড়কে ঝিকরগাছা উপজেলায় ৬শ’ একর জমির উপর ইলেকট্রনিকস, টেক্সটাইল, ওষুধ, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর যশোর হবে তৃতীয় বাণিজ্যিক নগরী। এই অঞ্চল কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ। সূত্রমতে, দেশি-বিদেশি অনেক বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। এখানকার উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে মানুষের কর্মসংস্থানের। বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রার মান।