এস এম দীপ্ত।। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছে দৈনিক মানবজমিনের সাংবাদিক পিপুল। এঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বিলের বাউত উৎসবে মাছ ধরার সময় দরিদ্র মৎস্যজীবীদের পিটিয়ে আহত করেছেন পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়রম্যান এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খান ও তার লোকজন। এসময় মৎস্যজীবীদের পেটানো ও তাদের গাড়ি ভাংচুরের ছবি তুলতে গেলে দৈনিক মানবজমিনের উপজেলা প্রতিনিধি শাহিবুল ইসলাম পিপুলকে মারধর করেন ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খান। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় পিপুল ভাঙ্গুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম খান থানায় গিয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিক পিপুলকে আবারো মারধরের হুমকি দেন।
জানাগেছে, প্রতিবছর বন্যার পানি নেমে গেলে ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিলে আশেপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ উন্মুক্তভাবে মৎস্য শিকার করতে আসে। স্থানীয় ভাষায় এসব মৎস্যজীবীদের বাউত বলা হয়। ভাঙ্গুড়ার বিভিন্ন বিলে যুগ যুগ ধরে এই বাউত উৎসব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালে উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের ছাতিয়ানের বিলে বাউত উৎসবে শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘদিন ধরে এই বিলের নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের পাথরঘাটা চক্রপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খান।
এ অবস্থায় শনিবার সকালে ওই বিলে বাউতরা নামলে ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ১০/১২ বাউত আহত হন। এছাড়া একই সময় বাউতদের ব্যবহৃত নসিমন-করিমন, অটোভ্যান গাড়িও ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। ভাঙচুরের ঘটনার ছবি তুলতে গেলে ভাঙ্গুড়া উপজেলার দৈনিক মানবজমিনের প্রতিনিধি শাহিবুল ইসলাম পিপুলকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেন ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খান। মারধরে পিপুলের হাতের একটি আঙ্গুল ভেঙে যায়। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে ডিউটি অফিসার এএসআই মুকিম হোসেন পুলিশ ফোর্স নিয়ে বিলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপর মারধরের ঘটনায় সাংবাদিক পিপুল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এসময় নুরুল ইসলাম খান থানায় গিয়ে সকলের সামনে অভিযোগ তুলে নিতে পিপুলকে শাসায় এবং পুলিশের সামনেই মারধরের হুমকি দেয়।
এদিকে বিলে মৎস্য শিকারে অংশগ্রহণ করা বাউত আব্দুর রহিম বলেন, প্রতিবছর উপজেলার বিভিন্ন বিলে উন্মুক্তভাবে মৎস্যজীবীরা বাউত উৎসব করেন। এসব বিলে বর্ষার পানিতে সরকারিভাবে মাছের পোনা ছাড়া হয়। যাতে এলাকার দরিদ্র মৎস্যজীবীরা উপকৃত হয়। এ কারণে এই ছাতিয়ান বিলেও প্রতিবছর মৎস্য শিকার করা হয়। কিন্তু এই বিলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খান। তাই মাছ মারতে আসলে তিনি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী বাউতদের উপর হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছেন এবং গাড়ি ভাঙচুর করেছেন।
ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিক শাহিবুল ইসলাম পিপুল বলেন, ‘মৎস্যজীবীদের উপর হামলা চালালে এবং তাদের গাড়ি ভাঙচুর করলে আমি ছবি তুলতে যায়। এসময় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খানের লোকজন আমাকে ছবি তুলতে নিষেধ করে। এরপরেও ছবি তুলতে গেলে নুরুল ইসলাম বাঁশ দিয়ে আমাকে এলোপাথারি আঘাত করেন। এরপর থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খান সেখানে গিয়েও মারধরের হুমকি দেন।’
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খানের মোবাইল নাম্বারে কল করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি মোবাইল কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
থানার ডিউটি অফিসার এএসআই মুকিম বলেন, ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খানের লোকজন মারপিট করার পরে লাঠিসোটা নিয়ে এলাকায় টহল দিচ্ছিল। তখন পুলিশ ফোর্স গিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে বিল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। এখন সাংবাদিক পিপুলের লিখিত অভিযোগ ও বাউতদের মারধর এবং গাড়ি ভাংচুরসহ সার্বিক ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ভাংগুড়া থানার ইন্সপেক্টরতদন্ত নাজমুল জানান, পিপুলের ঘটনা সত্য। তার আংগুল কেটে গেছে। তবে বিষয়টি মিমাংসার পর্যায়ে আছে।