রাজধানীর গুলশান থানাধীন বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন এলাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে ডিউটিরত কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কাউসার আলী নামে অপর এক পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মুখ খুলছেন না তিনি।
পুলিশ বলছে, পাগলের বেশ ধরেছেন কনস্টেবল কাউসার। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না তিনি।
অন্যদিকে কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলার বাদী হবেন নিহত কনস্টেবল মনিরুলের বড় ভাই। তিনিও পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোনায়।
রাজধানীর গুলশান-বারিধারার কূটনীতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে গুলিতে নিহত হন কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম। শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টা থেকে ১২টা ৫ মিনিটের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালকও। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেকজন বাইসাইকেল আরোহীও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
ঘটনার খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। মোতায়েন করা হয় সোয়াট টিম। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে ঘাতক কনস্টেবলকে হেফাজতে নেয় গুলশান থানা-পুলিশ।
ঘাতক কাউসার সম্পর্কে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। গত ৫-৬ দিন ধরে সে কারো সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতেন না। বলতে গেলে সে চুপচাপ ছিলেন। ঘটনা ঘটিয়েও ভারসাম্যহীন আচরণ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করার পর কাউসার আলী ঘটনাস্থলে আশপাশে ঘোরাফেরা করছিলেন। কিছু সময় তিনি দূতাবাসের সামনে বসেছিলেন। তার ঘুরাফেরা ও আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
রাতেই ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম সরকার বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। প্রাথমিকভাবে আমরা আক্রমণকারী পুলিশ সদস্যের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি সে পাঁচ, ছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। তার অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না। তার ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা বলে এসব জেনেছি।
ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের লোক ছিল, ঘটনা যে ঘটিয়েছে সেও আমাদের লোক। আসলে ঘটনাটা কি কারণে ঘটেছে সেটা আমরা জানার চেষ্টা করছি।
আজ (রোববার) বেলা ১১টার দিকে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতেই ঘাতক কনস্টেবল কাউসারকে নিরস্ত্র করে হেফাজতে নেওয়া হয়। তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, কিন্তু নিরুত্তাপ কনস্টেবল কাউসার।
ডিসি রিফাত বলেন, তিনি দীর্ঘদিন পুলিশে কর্মরত। পাগলের বেশ ধরেছেন তিনি। ঘটনা স্পর্শকাতর। ঘটনা গুরুতর। এই অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে জানে কনস্টেবল কাউসার। সংগত কারণে সে পাগলের বেশ ধরতে পারে। মুখে কুলুপ এঁটেছেন, অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর সে দিচ্ছেন না।
প্রাথমিক তদন্তে কী মনে হয়েছে, ঘাতক কাউসার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বা ভারসাম্যহীন? প্রশ্নের উত্তরে ডিসি রিফাত বলেন, পাগল প্রমাণ করতে পারলে সে মামলায় সুবিধা পেতে পারে। সেটা জেনে-বুঝেই হয়তো পাগলের বেশ ধরেছে। আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব। তারপর বলা সম্ভব, ঘটনার আসল মোটিভ।