নাশকতার আশংকায় ফাঁকা করা হয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বৃহত্তম ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের রেলইয়ার্ড। চিরচেনা ব্যস্ততম রেলইয়ার্ডের কর্মকান্ডে নেমে এসেছে শুন্যতা। চলমান হরতাল-অবরোধ কার্যকর করতে মৈত্রী এক্সপ্রেসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, ট্রেনের নিচে থেকে বোমা উদ্ধার এবং রেলগেটে রেললাইনের ওপর আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গত ২৭ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে ওয়াশফিটে বগিতে আগুন দেওয়া হলে ১১টি সিট পুড়ে যায়। বারবার নাশকতার প্রচেষ্টার কারণে পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য ঈশ্বরদী রেলইয়ার্ডের ট্রেনের বগিগুলো সরিয়ে ফাাঁকা করেছে।
জানা গেছে, ঈশ্বরদী বগিগুলো সরিয়ে পাকশীতে নতুন স্থাপিত রূপপুর স্টেশনে রাখা হয়েছে। রূপপুর স্টেশনকে ঘিরে ফেলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ইয়ার্ডের উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম লাইনগুলো ফাঁকা। তবে শুক্রবারে তেলবাহী এবং ভারত হতে আমদানিকৃত পণ্যের ওয়াগণ কিছু দেখা গেছে।
স্টেশনের সুপারিনটেন্ড মহিউল ইসলাম বলেন, বার বার নাশকতার কারণে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের এমটি বগিগুলো সরিয়ে রূপপুরে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইয়ার্ড সম্পূর্ণই ফাঁকা ছিলো। রাতে লোকোমেটিভের জন্য তেলবাহী ওয়াগণ এসেছে। এগুলো লোকোসেডের রিজার্ভ ট্যাংকিতে আনলোডের পর চলে যাবে। এছাড়াও ভারত হতে আমদানিকৃত মোলাসেস বহনকারী ওয়াগণগুলো জয়পুরহাট হতে এসেছে। এগুলোও চলে যাবে। বিশেষ প্রয়োজন এবং মালামাল লোড-আনলোড করা ছাড়া ইয়ার্ডে কোন বগি রাখা হবে না।
শুক্রবার দুপুরে রূপপুর স্টেশনে বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও মালবাহী বগি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্টেশনে প্রবেশের সবগুলো পথই ব্যরিকেড দিয়ে বন্ধ। ব্যরিকেড ডিঙ্গিয়ে স্টেশন এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে হুইসেল বাজিয়ে রেল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাঁধা প্রদান করেন। তারা বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। কঠোরভাবে ১২ ঘন্টা করে তারা ৬ জন করে ডিউটি করছেন। তবে তাদের অভিযোগ টানা ১৪ ঘন্টা না খেয়ে ডিউটি করছেন তারা। জরুরী অবস্থায় অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে এধরণের ডিউটিতে খাবার সরবরাহ করা হলেও রেল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কিছুই পাচ্ছেন না। লোকালয় ও দোকানপাট অনেক দূরে থাকায় ডিউটি বাদ দিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন।
ইতিহাস বলে, বৃটিশ আমল থেকে রেলইয়ার্ডের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত যাত্রীবাহী এবং মালবাহী ট্রেনের বগিতে পরিপূর্ণ থাকতো। দেশের বিভিন্ন এলাকা এবং ভারত হতে আমদানিকৃত পণ্যের বগিগুলোও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মালগুদাম এলাকায় পণ্য ওঠানো-নামানোর ব্যস্ততা নেই। সুদীর্ঘ ইয়ার্ডে অচল বগির পাশাপাশি সচল ও নতুন বগিগুলো এখানে ছিলো। প্রায় শতাধিক ট্রেনের বগির অবস্থান সবসময়ই থাকে ঈশ্বরদী ইয়ার্ডে। ট্রেনে অতিরিক্ত বগির প্রয়োজন হলে, বগি রিজার্ভ এবং বিশেষ ট্রেনের প্রয়োজন হলে ঈশ্বরদী থেকেই সংযোজন করা হয়ে থাকে। যেকারণে বিশাল ইয়ার্ড সবসময় ট্রেনের বগিতে পরিপূর্ণ থাকে।