পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় গ্রেফতার হলো খুনি, যে কারণে খুন হয়েছে প্রফেসর পত্নী হাজেরা খাতুন
———————-
এস এম রাজা।। প্রফেসর হবিবুল্লাহর নাম উচ্চারিত হবার সাথে সাথে তাকে চিনবেন না এমন লোক এই অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। অত্যন্ত মিষ্টভাষী, সদালাপী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এই ব্যক্তিটির নিজ বাড়ী ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল পশ্চিমপাড়া গ্রামে। তাঁর স্ত্রী রত্নগর্ভা হাজেরা খাতুন (৭৫)।
সাত সন্তানের জনক-জননী তারা।
প্রফেসর হবিবুল্লাহ সম্প্রতি মৃত্যু বরণ করায় এবং তাদের ছেলে মেয়েরা ঢাকা ও দেশের বাইরে অবস্থান করায় হাজেরা খাতুন একাই নিজ বাড়িতে অবস্থান করতেন। একাকী হাজেরা খাতুনের দেখাশোনা ও প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করে দিতেন তাঁর প্রতিবেশী আত্মীয় বৃদ্ধা সেলিনা খাতুন ও মিন্টু মোল্লা।
গত মার্চ মাসের ২৭/২৮ তারিখের দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বিলসলঙ্গী জোলাপাড়ার মৃত রতন আলীর ছেলে আবিদ হাসান (২৪) কে কাজের জন্য হাজেরা খাতুনের বাড়িতে নেয়া হয়। এই কাজের সুবাদে আবিদ বুঝতে পারে যে হাজেরা খাতুন বয়স্ক এবং ধনী মানুষ। সে বাসায় একাই অবস্থান করে। দেখাশোনার জন্য যে বৃদ্ধ নারী-পুরুষকে রাখা হয়েছে তারা ভালো মতো চোখে দেখে না। সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আর এই সুযোগটি পেয়ে যায় গত ৩ এপ্রিল’২৩ হাজেরার বোন আয়েশার মাধ্যমে শিমুল তুলা, সুপারি ও সজেনা পাড়ার জন্য আবিদকে সংবাদ দিলে।
৩ এপ্রিল’২৩ সকালে আবিদ ঐ বাড়িতে কাজে আসে। দুপুর আড়াই টার দিকে। সুযোগ বুঝে আবিদ ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় হাজেরা খাতুনকে নাকে বালিশ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে। এসময় হাজেরা খাতুনের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে নড়াচড়া করলে খাট থেকে মেঝেতে পড়ে যায় এবং মেঝেতে থাকা বটি লেগে কপাল কেটে যায়। এসময় হাজেরা খাতুনের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য খুনি আবিদ আবারও নাকে বালিশ চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
হাজেরা খাতুন মৃত্যু বরণ করেছে মর্মে নিশ্চিত হওয়ার পর আবিদ আলমারি খুলে নগদ প্রায় ৩০ হাজার ৭শ টাকা এবং স্বর্ণের দুল হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা থেকে তাঁর ছেলেমেয়েরা ফোন করে মায়ের কোন রকম খোঁজ খবর না পেয়ে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনকে জানালে তারা ঐ বাড়িতে গিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পায়। পরে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাজেরার মৃতদেহ দেখতে পায়।
এই সংবাদ থানা পুলিশকে জানালে তারা ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মর্গে প্রেরন করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে বৃদ্ধার লাশ হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনায় নিহত হাজেরা খাতুন ও প্রয়াত হবিবুল্লাহ দম্পতির ছেলে সিবা-এল-রাজ্জাক বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর থেকেই এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও খুনিকে গ্রেফতারের জন্য পাবনা পুলিশ সুপার মোঃ আকবর আলী মুনসির বিশেষ দিকনির্দেশনা প্রাপ্ত হয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান, ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী ও ঈশ্বরদী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান বাসির’র নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সন্ধিগ্ধ খুনি আসামি আবিদ হাসানকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে অভিযান পরিচালনা অব্যহত রাখে।
অবশেষে গত ১২ এপ্রিল’২৩ রাত ১০ টার সময় কক্সবাজার কলাতলিস্থ এহসান বোডিং এর ১০৩ নম্বর কক্ষ থেকে আবিদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় তার কাছ থেকে দুইজোড়া স্বর্ণের দুল, একজোড়া সিটিগোল্ডের চুরি, ভিক্টিমের ব্যবহৃত একটি বাটন ফোন এবং নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
এই প্রতিবেদক গ্রেফতারের বিষয়টি ঐদিন গভীর রাতে ইঙ্গিতে প্রকাশ করলেও কৌশলগত কারণে বিস্তারিত প্রকাশ করতে পারেননি।
আজ ১৫ এপ্রিল’২৩ সকালে পাবনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোঃ আকবর আলী মুনসি প্রেস ব্রিফিং-এ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পূর্ণ ঘটনার বর্ণনা উপস্থাপন করেন। এসময় ওপরে উল্লেখিত পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ অরবিন্দ সরকার সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।