আশাশুনি সংবাদদাতা।।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদরে ৮০ সহস্রাধিক মানুষ পাউবো’র বেড়ি বাঁধ ভেঙে দীর্ঘ ১০৬ দিন পানিতে প্লাবিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এলাকার খাদ্য ও সুপেয় পানি সঙ্কট এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় হাহাকার বয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও বিদ্যুত না থাকায় যোগাযোগের অভাবে মানুষ বিচ্ছিন্ন দীপে বসবাসের মত বসবাস করছে।
প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন আম্ফানের তান্ডবে ইউনিয়ন ৩টির একাধিক স্থানে বেড়ি বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে মানুষ ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, ফসল, সহায় সম্পদ হারিয়ে করুন পরিণতির সাথে যুদ্ধ করে কোন রকমে বেঁচে ছিল। গত ২০ ও ২১ আগস্ট নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে কমপক্ষে ৩/৪ ফুট বেশি উচু হয়ে রিং বাঁধ ভেঙে ইউনিয়ন ৩টির নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। এপর্যন্ত প্রতাপনগর ইউনিয়নের (সম্পূর্ণ) ১৭টি গ্রামের ৩৬ সহস্রাধিক মানুষ, শ্রীউলা ইউনিয়নের (সম্পূর্ণ) ২২টি গ্রামের ৩৭ সহস্রাধিক মানুষ এবং আশাশুনি সদর ইউনিয়নের (আংশিক) ৯ টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্লাবিত হয়েছে। প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল, বাড়ির ছাদ, বেড়ি বাঁধ ও রাস্তার উপর পলিথিন দিয়ে টোং ঘর বেঁধে বসবাস করছেন। অনেকে এলাকা ছেড়ে বাইরে বা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। পুরো এলাকার সড়ক ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
খাদ্য সঙ্কট ও সুপেয় পানির অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পশু পাখির বসবাস ও খাদ্য যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। পানি আটকানো সম্ভব না হওয়ায় পানি পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের দিকে ক্রমে ক্রমে ধাপিত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শ্রীউলা ইউনিয়নে ৮২ মে. টন ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ৭০ মে. টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। এলাকার মানুষের মধ্যে পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে, স্বাস্থ্য বিভাগ খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করলেও দুর্গম এলাকার মানুষের কাছে খুবই কই পৌছাচ্ছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ বিশেষ করে মহিলারা খুবই সঙ্গীন হয়ে পড়েছে। সুপেয় পানি সঙ্কট ও খাবার রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছেন। মূল বাঁধ নির্মাণের কাজ নভেম্বরের আগে শুরু করা সম্ভব হবে না তবে দ্রুত রিং বাঁধ আটকে যতগুলো পরিবারকে রক্ষা করা যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক ঘোষণা দিয়েছেন।