ঢাকা অফিস।।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা ধরে পুড়ছে ফুডস ফ্যাক্টরি। এদিকে ফ্যাক্টরির আগুনে অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল আল আরিফিন। লাশগুলো ফ্যাক্টরির উপর থেকে নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর ১.৩০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৭টি ইউনিট।
এদিকে বৃহস্পতিবার আগুনের ঘটনায় ছাদঁ থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে দুই নারী শ্রমিকসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। স্বপ্না রানী(৪৪) ও মিনা আক্তার(৪৩) মোরসালিন (২৪) ।
এছাড়া আহত হয়েছে আরো প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখনো বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে বলে তাদের স্বজনরা ফ্যাক্টরীর আগুনের সামনে অপেক্ষা করছেন। নিখোঁজের সংখ্যা কত তার কোন তালিকা প্রস্তুত করেনি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে রুপগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান জানান, আগুনের ঘটনার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে ফায়ার সার্ভিসের সাথে কাজ করছেন। এদিকে আগুনের ঘটনা তদেন্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহবায়ক করে পাচঁ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই কমিটি অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন রুপগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিসর উপ-সহকারি পরিচালক, পুলিশের একজন প্রতিনিধি, এবং কারখানা অধিদপ্তরের একজন ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, আগুনের ঘটনায় কতজন এখানো নিখোঁজ আছে তার একটি তালিকা প্রস্তুুত করার জন্য উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই মধ্যে তালিকা তৈরির কাজ চলছে। যারা নিখোজ রয়েছে বলে স্বজনরা দাবি করছেন তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে। একই সাথে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদেরও একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছেন।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রæপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন। করোনার কারনে প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। সেখানে কার্টুন ও ফুড ইউনিটের ৫ তলা ভবনে থাকা কারখাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টুন থেকে হঠাৎ করে আগুনের সুত্রপাত ঘটে। আগুন বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবন ছড়িয়ে পড়ে।
এসময় কালো ধোয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছুটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেয়।
আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করে। এসময় ছাদ থেকে লাফ দিয়ে স্বপ্না রানী(৪৪) ও মিনা আক্তার(৪৩) নামের দুই নারী নিহত হন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএসবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন।
এছাড়া গুরুতর আহত বাকিদের এম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, আগুনের ঘটনায় ছাদ তেকে লাফিয়ে পড়ে মোরসালিন নামে এজজন আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এছাড়া আরো সাতজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানের এডমিন ইনচার্জ সালাউদ্দিন মিয়া জানান, সেকশনের ৫ টি ফ্লোরে চারশত শ্রমিক বিকেলে ওভারটাইম করছিলেন। ভবনের উপড়ের ফ্লোরে আমাদের স্টোর ছিলো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল আল আরিফিন বলেন, সজিব কর্পোরেশনের সেজান জুস কারখানার ভবনটি অনেক বড়। কিন্তু এই ফ্যাক্টরীতে আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্য ফায়ার ফাইটিংয়ে ব্যবস্থা ছিলো খুবই অপ্রতুল। এছাড়া বিশাল আকৃতির ভবনটিতে উঠা নামা করার জন্য মাত্র দুটি সিড়ি ছিলো। কিন্তু এই ভবনটিতে কমপক্ষে চারটি সিড়ি থাকার প্রয়োজন ছিলো।
তিনি বলেন, ফ্যাক্টরীর আশেপাশে পানি ব্যবস্থা কম থাকায় একদিকে আগুন নিয়েন্ত্রনে নিয়ে আসলে আরেক দিকে আগুন দেখা যাচ্ছে। তবে আগুন এখন পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রনে আছে। ভেতের ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। তবে এই কারখানায় প্লাস্টিকের দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রনে আসার পর পুরো ভবনটি তল্লাশী চালিয়ে দেখা হবে।