ভুল করে সিএনজিতে টাকা ফেলে যাওয়ার পর রাতভর অভিযানে পাবনা জেলা পুলিশের উদ্ধারের একটি ছোট গল্প।
ইং ২৮/০৬/২০২১ তারিখ রাত্রী প্রায় ০১:০০ টা। দিনের কার্যক্রম শেষে ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পাবনা সদর ফাড়ির ইনচার্জ। এমন সময় সদর ট্রাফিক এর কনেস্টবল মোঃ মকলেছ একজন ব্যক্তি কে নিয়ে আমার রুমে হাজির,বললো, স্যার আমার পরিচিত আত্মীয় লাগে । নাম ঠিকানা – মোঃ শামিম হোসেন (২২) পিতা-মোঃ সাজু মিয়া সাং- পশ্চিম দিয়া বাড়ি থানা- রংপুর সদর। সে পৌর পল্লী ফাউন্ডেশন ঈশ্বরদী তে কর্মরত। সে আজ সকাল ১১:০০ ঘটিকায় অফিসের ১,৫৫,০০০/ টাকা নিয়ে ঈশ্বরদী হতে পাবনা আসার পথে তাহার টাকা ও মোবাইল এর ব্যাগ ভুল ক্রমে CNG তে রেখে চলে এসেছে । পরে উক্ত CNG ড্রাইভার কে খুঁজে পাচ্ছে না। তবে উক্ত CNG ড্রাইভার দাশুড়িয়া আকিজ পাম্প হতে গ্যাস নিয়েছে। সেখানকার সিসি ফুটেজে তাকে দেখা গেছে । তার গাড়ির নম্বর পাবনা-থ-১১-১১৭৮ । ঈশ্বরদী থানা পুলিশ দী্রঘ সময় ধরে আফতাব সিএনজির মূল সার্ভার থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে, তাকে পাবনা থানা পুলিশের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাদের পাবনাতে প্রেরন করেন ।
তারা পাবনা তে এসে অন্য এক CNG ড্রাইভার টোকন কে সিসি ফুটেজ দেখালে সে বলে যে, CNG ড্রাইভার এর নাম মাসুম, CNG মালিকের নাম সাবু, বাড়ি গোবিন্দা পাবনা। ওসি সদরের পরামর্শে সদর ফাড়ির ইনচার্জ ইনসপেকটর কালাম সঙ্গীয় এটিএসআই/ ইয়াকুব, কং/ ৩২৯ মোস্তাফা, টাকার মালিক শামিম, তার বন্ধু তন্ময় সহ CNG ড্রাইভার এর খোঁজ বের হন । প্রথমে CNG মালিক গোবিন্দার সাবু এর বাসায় । অনেক ডাকাডাকির পর সাবু উঠলেন। CNG তার বাড়িতেই পাওয়া যায় । CNG ভালো ভাবে চেক করেও কোন ব্যাগ না পেয়ে একটু হতাশা।সাবু সাহেব জানালেন তার CNG ড্রাইভার মোঃ মাসুম শেখ (৩৫) পিতা- মোঃ মিন্টু শেখ সাং- গোবিন্দা বর্তমানে নয়নামতি বাগান পাড়াতে ভাড়া থাকে। কোন বাড়ি তে ভাড়া থাকে তা তিনি জানেন না এবং তার কোন মোবাইল নম্বর ও তার কাছে নাই। তবে মাসুম এর ভাইয়ের স্ত্রী তার ভাড়া বাড়ির একটা লোকেশন দিলেন। এবার বাগান পাড়াতে গিয়ে মাসুম কে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া গেলনা না। ব্যর্থ হয়ে আবার যাওয়া মাসুম এর ভাইয়ের স্ত্রীর কাছে । তাকে অনেক অনুরোধ করে গাড়িতে করে , মাসুম এর বাড়ি চেনাতে বের হল টিম। তিনি মাসুম এর বাড়ি চিনিয়ে দিলেন। মাসুম কে ডাকাডাকি শুরু করলে মাসুম উঠলেন, তাকে টাকার ব্যাগের কথা জিজ্ঞাসা করতে সে বললো, কোন টাকার ব্যাগ পায় নাই। চিন্তায় পড়ে গেল টিম। তার ঘর তল্লাশি করেও কোন টাকার ব্যাগ পাওয়া গেলনা। চিন্তা আরো বেড়ে গেল। এবার মাসুম কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু , প্রথমে বকশিশের লোভ ,কোন কাজ হলো না। শেষে তাকে গ্রেফতার এর ভয় দেখালে তার সুর বদলাল।বললো, স্যার আমার কোন ক্ষতি হবে না তো। তাকে ভরসা দেয়ায় বললো টাকার ব্যাগ প্রথমে দেখতে পায় তার বন্ধু আল-আমিন। সে আল-আমিন কে ২২,০০০/ টাকার ভাগ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা তার এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে এসেছে। তবে সে ৩/৪ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছে ।
আবার যাত্রা শুরু । প্রথমে আল-আমিন এর বাড়ি গিয়ে ২২,০০০/ টাকা উদ্ধার করা হয় এবং পরে তার আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে অবশিষ্ট টাকা ও মোবাইল ফোন দুটি উদ্ধার করা হয়। সকল টাকা গননা করে পাওয়া গেল ১,৫১,০০০/ টাকা। টাকার মালিক CNG ড্রাইভার কে আবার ২০০০/ টাকা এবং তার ভাইয়ের স্ত্রী কে ১০০০/ টাকা বকশিশ দিলেন। অবশিষ্ট ১,৪৮,০০০/ টাকা মালিক কে বুঝিয়ে দেয়া হল। হারানো টাকা ফিরে পেয়ে টাকার মালিক যে কি খুশি তা বলে বোঝানোর মত না। সে বার বার জেলা পুলিশ পাবনা সহ বাংলাদেশ পুলিশ এর জন্য দোয়া করছিল। এভাবেই শেষ হলো এক সফল মানবিক অভিযানের।
জয় হোক মানবতার সংগ্রামের । জয় হোক জেলা পুলিশ পাবনার।