অপরিকল্পিত লকডাউন কার্যকর না হওয়ায় এবার ‘শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ করে এই কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কোভিড পরামর্শক কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে কোভিড-১৯ রোগের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। এরই মধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে সারা দেশেই উচ্চ সংক্রমণ, ৫০টির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এটি প্রতিরোধে খন্ড খন্ডভাবে (অঞ্চল ও জেলা ভিক্তিক) নেওয়া কর্মসূচির (লকডাউন) উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা হলো, কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের মতামত অনুযায়ী, যেসব স্থানে পূর্ণ ‘শাটডাউন’ প্রয়োগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
বর্তমান করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে এবং জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধে কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারা দেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করছে। এতে বলা হয়, জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য সভায় তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এ রোগ থেকে পূর্ণ মুক্তির জন্য ৮০ শতাংশের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। বিদেশ থেকে টিকা সংগ্রহ, লাইসেন্সের মাধ্যমে দেশে টিকা উৎপাদন করা এবং নিজস্ব টিকা তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার প্রতি কমিটি পূর্ণ সমর্থন জানায়। উল্লেখ, এর আগে সীমান্ত জেলাগুলোতে এ কমিটি ‘লকডাউন’ দেয়ার পরামর্শ দিলেও বিলম্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লকডাউন দেয়া হয়। অতপর ‘আম বাণিজ্য’ অজুহাত দেখিয়ে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলায় লকডাউনে বিলম্ব করা হয়। অতপর সীমান্ত জেলাগুলোতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির পরামর্শে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় এবং দফায় দফায় সে বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থায় সীমান্ত দিয়ে মানুষকে আসা যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এতে ভারতে যাওয়া প্রচুর মানুষ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসে। তারা শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা বহন করে প্রথমে সীমান্ত জেলা পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে দেন। বেড়ে যায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক শংক্রমণ। এমনকি রাজধানী ঢাকার দিকে ধেয়ে আসতে থাকে ডেল্টা। অতপর রাজধানীর আশপাশের ৭টি জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। অপরিকল্পিত ভাবে এবং হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা করায় মানুষ বিপাকে পড়ে যায়। সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যানবাহন বন্ধের মাধ্যেই মানুষ রাস্তায় নামে এবং যাতায়াত করে। এ অবস্থায় গতকাল পরামর্শক কমিটি লকডাউন শব্দের পরিবর্তন করে সারা দেশে ১৪ দিন শাটডাউনের সুপারিশ করল।