ঢাকা অফিস।।
জুলাই থেকে বড় পরিসরে সাধারণ মানুষের জন্য গণটিকাদান শুরুর আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আগামী রোববার দ্বিতীয় পর্যায়ে এক সঙ্গে আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি অসহায় পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করবেন।
ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ভ্যাকসিনের জন্য আমরা পৃথিবীর সব জায়গায় চেষ্টা করেছি। যেখান থেকে পেয়েছি, তুলনামূলক কম মূল্যেই পেয়েছি। আরও পেতে দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। কেনার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি নিজেরাও উৎপাদনের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমরা এই ভ্যাকসিনের জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি। কারও দয়া চাই না, কিনেই নিতে চাই। আশা করছি জুলাই থেকে সাধারণ পর্যায়ে টিকাদান শুরু করতে পারব।
সারাবিশ্বেই ভ্যাকসিনের অর্পাপ্ততার বিষয়টি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বর্তমানে ভ্যাকসিন মার্টেটা কিন্তু একটি সেলারস মার্কেট। কেউ কিন্তু বিক্রি করছে না। আমরা পৃথিবীর সব জায়গায় চেষ্টা করছি। তখন আমাদের কাছে যে অপশনটা ছিলো সেটা কিন্তু আমরা গ্রহন করেছি। এখনও পর্ন্ত বিশ্বের মধ্যে খোজ নিয়ে দেখতে পারবেন লোয়েস্ট প্রাাইসে আমরা কিন্তু সেটা পেয়েছি। অল্টারনেটিভ সোর্সের জন্য আমরা দিনরাত খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউইকে বা ইউরোপ বা চায়না সব দেশেই প্রতিনিয়তই আমাদের রাষ্ট্রদূতেরা এবং আমরা যোগাযোগ করে যাচ্ছি। ইতমধ্যে আরা কয়েকটা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি আশা করছি খুব দ্রæত আমরা টিকা পাবো।
ড. কায়কাউস বলেন, প্রায়ই শোনা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকা পাওয়া যাচ্ছে। তারা বলছে দিচ্ছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত কিছু করেনি। এখনও দেরি আছে। আমরা কিন্তু কনস্টান্ট সেখানের রাষ্ট্রদুত প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছে কখন কবে কিভাবে পাওয়া যাবে।
মুখ্য সচিব ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন, উপ-পরিচালক (উপ সচিব) জাহেদুর রহমান প্রমুখ। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন মন্তব্য করে আহমদ কায়কাউস বলেন, বিভিন্ন দেশে ভূমিহীন, গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার নজির থাকলেও ভূমিহীন-গৃহহীনদের ডেকে তাদের বাড়ি-ঘর দেওয়ার নজির আর নেই।
মুখ্য সচিব বলেন, অসহায় মানুষকে এভাবে ঘর দেওয়া অন্তর্ভুক্তি উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল। বিশ্বে এটা নতুন মডেল, আগে কখনও কেউ এটা ভাবেনি।
সরকার অসহায় ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে আহমদ কায়কাউস বলেন, অনিয়মের অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখানে অনিয়মের বিষয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের কথা তুলে ধরে মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ১৯টি বহুতল ভবনে ৬০০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদান করেন।
খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে আরও ৩ হাজার ৮০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান মুখ্য সচিব।
অনেক সরকারি জমি অবৈধ দখলে ছিলো জানিয়ে কায়কাউস বলেন, সেখান থেকে জমি এনে পুণর্বাসন করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে প্রায় ৩৩ একর জমি অবৈধ দখলে ছিলো। সেটি এখন নান্দনিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। গৃহহীনের নামের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় আার্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ড. কায়কাউস বলেন, আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এর মাধ্যমে ৯৯ শতাংশই সঠিক ছিলো না। যার স্বার্থহানি হয়েছে তিনি এমন অভিযোগ করেছেন। তবে বিভিন্নভাবে বা গণমাধ্যমে অভিযোগ আসলে আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করি। কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উপকারভোগী অনেকে টাকার জন্য ঘর-জমি বিক্রি করে দিতে পারে-এক্ষেত্রে কিছু ভাবছেন কি না-অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাইলেই বিক্রি বা হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।