প্রনব মুখার্জী অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন,দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে —-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা অফিস।।
আওয়ামী লীগের চিন্তা ও কাজ বাংলাদেশের মানুষকে নিয়েই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ কীভাবে একটু ভালো থাকবে সেটাই আমাদের করতে হবে। এজন্য দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতাকর্মীদের কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। বাংলাদেশের যেকোনো সময়ে পাশে ছিলেন তিনি। পঁচাত্তরের পর আমরা যখন দিল্লিতে ছিলাম, তিনি ও তার পরিবার সব সময় আমাদের দেখাশোনা করেছেন। বিশেষ করে পদ্মা সেতু বিষয়ে যখন দুর্নীতির কথা উঠলো আমার বিরুদ্ধে এবং ওয়ান/ইলেভেনের সময় তিনি আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির কথা ওঠে তখন প্রণব মুখার্জি আমাদের সহযোগিতা করেছেন। ওয়ান/ইলেভেনে জেলখানায় যখন ছিলাম তখনো তিনি আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। যেকোনো বিপদে তিনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।’
সাংগঠনিক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেয়া আছে। তাছাড়া আমরা সরকারে আছি। জনগণের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। যেভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিষয়ভিত্তিক সবাইকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনী ইশতেহারে জাতির কাছে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সে প্রতিশ্রুতি কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বাকি আছে সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু আমরা সরকারে আছি সে কারণে আমরা দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। প্রথম পর্যায়ে আমরা ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। এবার এসে আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমাদের সম্পাদকমন্ডলীতে যারা আছেন তারা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করবেন। যে আলোচনা আমাদের দেশ গড়ার কাজে লাগবে। আমরা বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই।’
চলতি মাসের ২৮ তারিখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। সীমিত আকারে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদযাপন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে শেখ হাসিনা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভার কার্যক্রম সম্পর্কে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আমাদের সভাপতির একটা গাইডলাইন চাই। আমরা নিজেরা কিছু বিষয় আলোচনা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে- আমাদের যেসব জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, সেগুলোকে আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে আপনার অফিসে (সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, ধানমন্ডি) পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আরেকটি হলো এই সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সম্পাদককে চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি গঠনের সুপারিশ তৈরি করেছি, সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক আপনি।
তিনি আরো বলেন, আর আমরা সীমিত আকারে সাংগঠনিক কর্মসূচি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পালন করার জন্য একটি নির্দেশনা দিচ্ছি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আপনার জন্মদিন। এটা আমরা খুব সীমিত আকারে পালন করবো। এটা প্রতিবছরই করে থাকি। আপনি না বললেও করবো।
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমার জন্মদিন পালনের প্রস্তাব আমি গ্রহণ করছি না। বাকিগুলোর মধ্যে সাব-কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। এটা করা উচিত। যাতে সাব-কমিটিগুলো বসতে পারে। বিষয়ভিত্তিক সেমিনার করা, আলোচনা করা। আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সেগুলো ঠিক করা। সাব কমিটিগুলো এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলন কেন্দ্র টিএসসিকে নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিটাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই। সম্পূর্ণ আধুনিকভাবে টিএসসি প্রতিষ্ঠা করব। এটা হচ্ছে আমাদের ছাত্র শিক্ষকদের একটা মিলন কেন্দ্র। সেটাকে আরও সুন্দরভাবে তৈরি করব। সেই নির্দেশ আমি দিয়েছি। ওখানে নতুনভাবে যা যা করার দরকার করব।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে আমি কথা বলেছিলাম। আমি জানি যে, বিশ্ববিদ্যালয় এটা করতে পারবে না। কাজেই যে টাকা পয়সার খরচা লাগে…। আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, জাতির পিতাও ছাত্র ছিলেন। কাজেই আমরাই এটা করে দেব, সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজটাকেও আমরা খুব সুন্দরভাবে করতে চাই। কারণ এটা একটা আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান, সারা বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য আসে। কাজেই সেখানে যাতে ৫ হাজার রোগীর চিকিৎসা হতে পারে, সেইভাবে আমরা নতুনভাবে এটাকে গড়ে তুলতে চাই। হ্যাঁ, পুরনো ঐতিহ্য কিছুটা আমরা ধরে রাখতে পারি। কিন্তু ভেতরে সম্পূর্ণ একটি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ আমরা নির্মাণ করে দেব। ইতোমধ্যে সে প্ল্যানটাও তৈরি করা আছে। সেটা যাতে দ্রুত হয়, সে ব্যবস্থাটা করতে চাই। সেখানে আমাদের ঐতিহ্যগুলো রক্ষা করা, মেডিকেল কলেজের সাথে যেহেতু আমাদের শহীদ মিনার এ শহীদ মিনারটাকেও সুন্দরভাবে তৈরি করা, যেভাবে আছে ডিজাইনটা ঠিক রেখে শহীদ মিনারটা করা। শহীদ মিনারের সাথে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল। সেই আমতলায় দাঁড়িয়ে আমাদের ভাষা আন্দোলন শুরু। যেখানে ১৬ মার্চ জাতির পিতা ১৯৪৮ সালে মিটিং করেছিলেন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য। কাজেই সেই আমতলাটাও রক্ষা করা। সবকিছু নিয়ে আমরা করবো, সেই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি।’
তাছাড়া ময়মনসিংহ নতুন বিভাগীয় শহর, সেখানে বিভাগীয় কমিশনার ভবন নির্মাণের নকশাও অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তাছাড়া আমাদের বিপিএটিসি’ প্রশাসন ক্যাডারদের ট্রেনিংয়ের যে ইনস্টিটিউট, সেটা খুবই করুণ-জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে একটি নতুন প্ল্যান নতুন ডিজাইন আমরা করে দিতে চাচ্ছি। তারপর প্ল্যানটা দেখেও অনুমোদন দিয়ে দিলাম। ‘সেই সাথে রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরিটাকে একটা আধুনিক একটা লাইব্রেরি করতে চাই। কারণ এটা খুবই পুরনো। খুবই জরাজীর্ণ এবং বিশেষ করে অডিটোরিয়ামটা খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। যাতে একটা আধুনিক পাবলিক লাইব্রেরি তৈরি করা যায়, যেখানে ডিজিটাল ব্যবস্থা থাকবে। ডিজিটাল লাইব্রেরি হবে এবং সেখানে সুন্দর সাইবার ক্যাফে’রও ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে বসতে পারে। আমাদের যে জাতীয় জাদুঘর, তার পিছনে যে পুকুর এবং পাবলিক লাইব্রেরির ল্যান্ডস্কেপটা, আর পাবলিক লাইব্রেরিটাকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। তারও একটা প্ল্যান অলরেডি করলাম এবং সেটা তৈরি করাই আছে। সেটার কাজ যাতে দ্রুত শুরু হয়, সে ব্যবস্থা আমরা নিতে চাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্পাদকমনরন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল ইসলাম চৌধুরী নাদেল, বিপ্লব বড়ুয়া, অসীম কুমার উকিল, মৃণাল কান্তি দাস, হাবিবুর রহমান সিরাজ, সুজিত রায় নন্দী, সেলিম মাহমুদ, রোকেয়া সুলতানা, ওয়াসিকা আয়শা খান, শাম্মী আহমেদ, সায়েম খান প্রমুখ।