ঢাকা অফিস।।
দেশে গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহী বিভাগের বেশ কিছু জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে৷ বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আক্রান্তদের অধিকাংশই ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের শিকার বলে জানিয়েছে প্রশাসন৷
রাজশাহী বিভাগে সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় ২৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে রাজশাহী জেলাতেই ১৩৩ জন৷ আর সীমান্ত এলাকায় করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০৮ জন৷ এ পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭ হাজার ৩২১ জনে৷ গত ২৪ ঘন্টায় ওই বিভাগে মারা গেছেন ১২ জন৷ এর আগের দিন মারা গেছেন ১৬ জন৷
গত ২৪ ঘন্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয় জন, রাজশাহীতে চার জন, নওগাঁয় একজন ও বগুড়ায় একজন মারা গেছেন৷ এই বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনায় ৫৯২ জনে মারা গেছে৷
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, জেলায় নমুনা পরীক্ষায় শতকরা ৪০ ভাগ এখনো পজেটিভ আসছে৷ আর হাসপাতালের বেড যত বাড়ানো হয় ততই ভরে যায়৷ প্রথমে করোনা রেগীদের জন্য ২০ বেড, তারপর ৩০ বেড এবং এখন ৫০ বেড করা হয়েছে৷ তাও ভরে গেছে৷
তিনি জানান, পরিস্থিতি সামলাতে তারা তিনটি চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন৷ লকডাউনেও বিভিন্ন স্থানে লোক সমাগম কমানো যচ্ছেনা৷ আমের মৌসুম হওয়ায় আম ব্যবসায়ীরা লকডাউন মানছেন না৷ সীমান্তে অবৈধ যাতায়ত বন্ধ করা যাচ্ছেনা৷
এদিকে সারা দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যাও আবার বাড়ছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় সারা দেশে আরো ৪৩ জনের মারা গেছে৷ শুক্রবার মারা গেছে ৩৪ জন৷ এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ হাজার ৮০১ জনে৷ ২৪ ঘন্টায় নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৪৭ জন৷ ফলে দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ৯ হাজার ৩১৪ জনে৷
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪৩ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২ জন, রাজশাহীতে ১২, চট্টগ্রামে ৮, খুলনায় ৫, সিলেটে ১, রংপুর ৩ ও ময়মনসিংহে ২ জন মারা গেছেন৷
আইইডিসিআর-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের শতকরা ৮০ভাগই ভারতীয় ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ৫০ টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে এ তথ্য জানিয়েছে৷
গবেষণাকৃত ৫০টির মধ্যে ৪০টিতে নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়৷ এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবং একটি অজ্ঞাত ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে৷
এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১৬ নমুনায় ১৫টি, ঢাকার ৪টি নমুনার ২টি ও গোপালগঞ্জ থেকে ৭ নমুনার সবকটিই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷ আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ আসা সাত জনের দেহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷
এই সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন৷ তবে বিএসএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ”এখনো দ্বিতীয় ঢেউই তো শেষ হয়নি, চলছে৷ সংক্রমণ এখনো শতকরা ১১ ভাগের বেশি৷ পাঁচ ভাগের নিচে নামার পর আবার বাড়লে তাকে আমরা নতুন ঢেউ বলতে পারি৷ এখনো তো আবার মৃত্যু বাড়ছে৷”
তিনি মনে করেন, এখন বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয়ভাবে৷ তবে জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা আরো বাড়াতে হবে৷ না হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি বোঝা যাবেনা৷
তার মতে,‘‘করোনা তো করোনা৷ সেটা ভারতীয় হোক আর আফ্রিকান হোক৷ এটা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে এখন সারাদেশে করোনা চিকিৎসা, বিশেষ করে অক্সিজেনের ওপর জোর দিতে হবে৷ আর স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নাই৷ মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হবে৷ যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে৷”
আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, “সারা দেশে যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে তা বলার সময় এখনো আসেনি৷ যে নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছি তা সারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না৷ তবে সীমান্ত এলাকা এবং ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে৷”
তিনি বলেন,‘‘তাদেরই জিনোম সিকোয়েন্স আমরা করেছি যারা ২৫মে ও পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে এসেছেন বা ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন৷ ৫০ জনের মধ্যে যে ৪০ জন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমিত তাদের ১৪ জনের ভারত যাওয়া বা ভারত থেকে আসা লোকজনের সংস্পর্শে আসার তথ্য নেই৷” ডয়চে ভেলে