ঢাকা অফিস।।
আন্তঃজেলা বাস-ট্রেন-লঞ্চ চলাচল বন্ধ। বন্ধ শপিংমল, দোকানপাট। চালু শিল্প-কারাখানা। সীমিত পরিসরে খোলা সরকারি-বেসরকারি অফিস। ঢাকার রাস্তা গণপরিবহন শূন্য। দাপট ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার। রাস্তায় রীতিমতো মানুষের ভিড়। কোথাও কোথাও হালকা যানজট। দোকানপাট খুলে দেয়ার দাবিতে চলছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলেছে বিক্ষোভও।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামলাতে সাত দিনের জন্য জারি করা বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রথম দিনে এমনই ছিল দৃশ্যপট। গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কর্মজীবী মানুষকে। গণপরিবহন বন্ধের সুবাদে সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশার বাড়ার দ্বিগুণ বা সময়ভেদে তারও বেশি হাঁকতে দ্বিধা করেনি চালকরা। ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন অফিস ও কর্মস্থলগামী মানুষ। পরে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এরই মধ্যে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটে আটকা পড়ে সহস্রাধিক গাড়ি। এদিকে, দোকানপাট খুলে দেয়ার দাবিতে ফের বিক্ষোভ হয়েছে ইসলামপুর ও নিউমার্কেট এলাকায়। ঢাকার বাইরেও কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
গণপরিবহন না পেয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধ করেন অফিস ও কর্মস্থলগামী মানুষ। এতে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে তারা সড়কে অবস্থান নেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ এসে অবরোধকারীদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। অবরোধকারীরা বলেন, সরকারের নির্দেশনার কারণে প্রায় সকল কারখানা খোলা রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য গাড়ির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় তাদের কর্মস্থল খোলা থাকলেও তারা পরিবহন সংকটে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না।
গতকাল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যদিনের মতো মানুষের চলাচল নেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। খোলা আছে পাড়া মহল্লার দোকান, ফেরি করে চলছে তরকারি-মাছ বিক্রি। অনেকেই ঘর থেকে বাইরে এসেছেন কিন্তু মুখে নেই মাস্ক। বরাবরের মতোই মাস্ক না পরার পেছনে নানা অজুহাত। কোনও কোনও এলাকায় দেখা গেছে চায়ের আড্ডাও। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে পাড়া মহল্লায় সব ধরনের দোকানই খোলা ছিল। শুধু তাই নয়, চায়ের দোকানে আড্ডা ছিল আগের মতোই। আড্ডা দেয়া লোকজনের অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ ফেরি করে তরকারি বিক্রি করেন রহিম মিয়া। মুখে মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক অনেকক্ষণ পরা ছিলাম। মুখ ঘামিয়ে যায়, মাত্র খুললাম। আবার পরবো, একটু পরেই। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে, খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রি ও সরবরাহ করা যাবে। কোনও অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। তবে রাজধানীর অনেক এলাকায় হোটেল খোলা ছিল। হোটেলে বসে লোকজনকে খেতেও দেখা গেছে। রাজধানীর মিরপুর ১ এর দক্ষিণ বিশিল এলাকায় খোলা ছিল চায়ের দোকান। সেখানে চা খাচ্ছিলেন, মিথুন ও তার বন্ধুরা। জানালেন, ঘরে থেকে বিরক্ত লাগছে, তাই অল্প সময়ের জন্য বের হলাম। আবার ঘরে চলে যাবো। মোহাম্মদপুর, গ্রিনরোড, লালবাগ, হাজারীবাগ এলাকা ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। দোকানপাট খোলা, রয়েছে মানুষের চলাচল। কিছু মানুষ মাস্ক পরে বের হলেও অনেকেই এ ব্যাপারে উদাসীন। যদিও সরকার বলছে, আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কোনও এলাকায় আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
লকডাউনের প্রথম দিনে রাজধানী থেকে ছাড়েনি কোনো আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ ও ট্রেন। ফাঁকা ছিল বাস টার্মিনালগুলো। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও কোনো যাত্রীর দেখা মেলেনি। কমলাপুর স্টেশনজুড়ে ছিল সুনসান নিরবতা। একদিন আগেও স্টেশনটি যাত্রীদের পদচারণায় ছিল মুখর। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে দেশের এ প্রান্ত থেকে অপ্রান্ত পর্যন্ত ছুটে চলা ট্রেনগুলো। স্টেশনে যাত্রীদের পদচারণা নেই। নেই কোলাহল। নেই হকার ও কুলিদের বিকিকিনির চিৎকার চেঁচামেচি। কিছু পরিচ্ছন্ন কর্মী প্ল্যাটফর্ম ধোঁয়ামোছার কাজ করছেন। এছাড়াও রেল স্টেশনের নিরাপত্তায় দায়িত্ব নিয়োজিত আনসার সদস্যরা বিভিন্ন বুথে অবস্থান করছেন। কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে ৫ এপ্রিল সোমবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সব ধরনের যাত্রীবাহী রেল চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে মালামাল ও তেল পরিবহনকারী কিছু রেল চলাচল করবে। তিনি বলেন, সকালে দুইটি কনটেইনার রেল কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে চট্রগ্রামের উদ্দেশে। এরমধ্যে একটি সকাল ছয়টা ৫০ মিনিটে আরেকটি সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে ট্রেন দুটি চট্রগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তবে আজ ঢাকায় কোনো মালবাহী ট্রেন প্রবেশ করেনি।
লকডাউন আর বাড়বে কিনা জানা যাবে বৃহস্পতিবার
আগামী সোমবার পর্যন্ত চলমান লকডাউন আর বাড়বে কিনা এ সপ্তাহ দেখে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ কথা জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখি কী হয়। মানুষকে কো-অপারেট করতে হবে। আপনারা তো বার বার বলছেন। কিন্তু এখনো পুরোপুরি কো-অপারেশন। সবাই যদি মাস্ক ব্যবহার করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাহলে তো অসুবিধা হওয়ার কথা না। তিনি বলেন, দেখি আমরা সাত দিন পর কী অবস্থা হয়। বৃহস্পতিবার আমরা রিভিউ করব ইনশাআল্লাহ। মানুষকে তো কো-অপারেট করতে হবে। আপনারা তো বলছেন সবাই যদি একটু মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তবে তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।