—————————————————-‐——
স্টাফ রিপোর্টার: বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রীজের কেপিআইভূক্ত এলাকায় অবৈধ বালুমহাল সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে প্রশাসনের টনক নড়েছে। বুধবার (৫ জুন) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন এবং কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে বালুমহালে।
হার্ডিঞ্জ ব্রীজের একপ্রান্ত রয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলাধীন এবং অপরপ্রান্ত ভেড়ামারা উপজেলার আওতাধীন । যেকারণে উভয় উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের স্থাপনার নিরাপত্তা বিধান এবং কেপিআইয়ের নির্দেশনা বাস্তাবয়নের জন্য মাঠে নেমেছে বলে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে।
এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু এবং ঈশ্বরদী সহকারি কমিশনার (ভূমি) টি.এম. রাহসিন কবির। ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ঘাট থেকে শুরু করে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নদীবন্দর এলাকা পর্যন্ত এবং ভেড়ামারা প্রান্তে রায়টা হতে অভিযান শুরু করা হয়।
অভিযানের সময় বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী দুজন ড্রেজার মালিককে ৫০হাজার টাকা করে মোট ১লাখ টাকা জরিমানা এবং ড্রেজার মেশিন আটক করা হয়। এরা হলেন ভেড়ামারা ফয়েজুল্লাহপুর গ্রামের ইদ্রিস প্রামানিক ছেলে আরিফুল ইসলাম ও রায়টা গ্রামের বজলু মহলদারের ছেলে রফিকুল ইসলাম।
ঈশ্বরদীর সরকারি কমিশনার (ভূমি) রাহসিন কবির জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রীজের কেপিআইভুক্ত এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বালু উত্তোলনকারীরা যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রীজের পাশে এবং গাইড ব্যাংক এলাকায় বিশাল বিশাল বালুর স্তুপ স্থাপন করা হয়েছে। বালুর স্তুপ যারা রেখেছে তাদেরকে দ্রুত বালু সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তারা বলছে ওই এলাকা রেলের, রেলের কাছ থেকে লীজ নিয়ে তারা বালুর স্তুপ সাজিয়ে ব্যবসা করছে। আমাদের কাগজপত্রে দেখা যায় হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নীচের এলাকা খাস খতিয়ানভুক্ত। যেকারণে ওই জায়গা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রেলের স্টেট অফিসার বর্তমানে হজ্বব্রত পালন করতে সৌদিতে অবস্থান করছেন। তিনি আসলে ওই জায়গা আমরা মাপামাপি করবো। মাপজোকের পর যদি জায়গা রেলের হয়, বালু অপসারণে রেল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে। আর জায়গা যদি আমাদের হয় আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কেপিআইভূক্ত এলাকা সংরক্ষণ করবো। আমরা কোনভাবেই ওই এলাকায় বালু উত্তোলন বা বালু সংরক্ষণ এ্যালাউ করব না।
২০১৭ সালে কেপিআইভূক্ত এলাকার ত্রুটি-বিচ্যুতি ও নিরাপত্তা বিষয়ে একটি সার্ভে টীম গঠন করা হয়। রাজশাহী রেঞ্জের তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন) নরেশ চাকমার নেতৃত্বে পরিচালিত এই সার্ভে টীম ঐ বছর ২১ মে ১৩৫২/১৭ স্মারকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কেপিআই এর সুষ্ঠু নিরাপত্তার সাথে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সুনাম জড়িত। হার্ডিঞ্জ ব্রীজ প্রসংগে বলা হয়, অপ্রতুল নিরাপত্তা প্রহরী, দর্শনার্থী রেজিষ্টার নেই, নিরাপত্তা কমিটি গঠিত হয়নি, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা নেই, ব্রীজের উভয় পাশে কাঁটাতারের বেড়া এবং সশস্ত্র টহলের ব্যবস্থা নেই। ব্রীজের নিরাপত্তার স্বার্থে উল্লেখিত অভিমত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশের পাশাপাশি প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় ব্রীজের উভয় পাশে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন, ড্রেজিং, মাছ ধরা, নৌকা ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মূল ব্রীজের উভয় পাশে ২ কিলোমিটার দূরুত্বের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার সুপারিশসহ হার্ডিঞ্জ ব্রীজের প্রবেশ মূখ এবং উভয়পাশ থেকে ঝোপ-জঙ্গল, দোকানপাট অপসারণের কথাও বলা হয় ঐ প্রতিবেদনে।
কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এ সুপারিশের কোনটাই বাস্তবায়ন করেনি। বরং তারা করেছে এর উল্টো কাজ। হার্ডিঞ্জ ব্রীজের সন্নিকট এলাকার জায়গা লীজ দিয়ে সেখানে বালু ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এ বালুর ব্যবসা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। হার্ডিঞ্জ ব্রীজের সন্নিকট এলাকায় লীজ দেয়া এসব জায়গায় গড়ে উঠেছে পাহাড়ের মত বালুর স্তুপ। স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড় সমান বালুর স্তুপ সাজিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াই বছরের পর বছর করছে রমরমা বালুর ব্যবসা।
হার্ডিঞ্জ ব্রীজের পাশে নদী তীরবর্তী গাইড ব্যাংক এলাকা কৃষিকাজের জন্য রেলওয়ের ভূসম্পত্তি অফিস থেকে লীজ দেয়া হয়েছে। এসব জমিতে কৃষিকাজ হয় না। লীজ গ্রহীতাদের নিকট থেকে ভাড়া নিয়ে বালুর ব্যবসা করে বালু ব্যবসায়ীরা। তাদের বালুর স্তুপ বড় হতে হতে বিশাল স্তুপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ও লালন শাহ সেতু। রেলওয়ে প্রকৌশলীদের মতে, বালু স্তুপের কারণে বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর স্রোত বাধাগ্রস্থ ও গতিপথ পরিবর্তন হয়। এতে নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয় ব্রীজের পিলার ও গাইড ব্যাংকের নিরাপত্তা।