একটি প্রতিবাদ একটি রাজনৈতিক মূল্যায়নঃ প্রসঙ্গ পাবনা ৪ এর উপনির্বাচন
আমি গভীর দুঃখের সাথে প্রতিবাদ জানাচ্ছি, গতকাল চ্যানেল আইতে আমাদের দলীয় প্রার্থী সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সদ্য নির্বাচিত প্রিয় আগ্রজ নুরুজ্জামান বিশ্বাসের সাথে বিএনপি দলীয় প্রার্থী জনাব হাবিবুর রহমান হাবিবের রাজনৈতিক কথপোকথনের এক পর্যন্তয়ে থুথু নিক্ষেপ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমি মনে করি অবিলম্বে তাঁর এই আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। নয়তো ঘটনার সূত্রে একটি খারাপ উদাহরণ তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে হাবিব ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, গতকালের নির্বাচনে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গের মতো ফলাফলের জন্য তিনি তাঁর দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। প্রসঙ্গতঃ তাঁর রাজনৈতিক অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কতিপয় দিক তুলে ধরতে চাই।
হাবিব ভাইয়ের প্রথমবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়া, পরাজিত হওয়া এবং দ্বিতীয়বারে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান এবং বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ভেতরে যে অরাজনৈতিক আবেগের প্রকাশ রয়েছে সে বিষয়ে যাবো না। গতকালের নির্বাচনে নজীরবিহীনভাবে তাঁর নিজের কেন্দ্র সহ গোটা নির্বাচনী এলাকায় কোনো এজেন্ট দিতে না পারার নজীর সম্ভবত বাংলাদেশে বিএনপির ইতিহাসে নাই। এর প্রধানতঃ কারণ,
দলের মূল নেতৃত্ব তাঁর পাশে আন্তরিকভাবে না দাঁড়ানো। কারণ তিনি যখন পাবনা জেলার দায়িত্ব পেলেন তখন আমার নিজের উপজেলা আটঘরিয়ার শক্তিশালী নেতা এবং যাঁর হাতে বিএনপির যৌবনপ্রাপ্তি সেই আমিনুল ইসলামকে নেতৃত্ব থেকে অসম্মানজনকভাবে সরিয়ে দিয়ে তাঁর মাইম্যান নির্ভর কমিটি গঠন। এই ঘটনায় আটঘরিয়ায় বিএনপির রাজনীতি মাঝ নদীতে নাবিকহীন নৌকার মতো দিশাহারা হয়েছে। নেতাকর্মীকে করে দিয়েছেন অভিভাবকহীন। ফলে নির্বাচনী মাঠে তিনি সভাসমাবেশ ডেকে জনশূন্য হয়ে ঘরে ফিরেছেন, যা হতবাক হওয়ার মতো।
ঈশ্বরদী উপজেলার মূল নেতা সিরাজুল ইসলাম সরদার, সামসদ্দীন মালিথা, জাকারিয়া পিন্টু ন্যাড়া বাবলুকে এড়িয়ে বিএনপির রাজনীতি করতে যাওয়ার মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত তাঁকে তাঁর নিজের উপজেলায় একা করে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতাদের দৃশ্যমান হওয়া আর আন্তরিকভাবে একাকার হওয়ার ভেতরের পার্থক্যগুলো আশাকরি কারো কাছে বুঝিয়ে বলার দরকার হয়না।
আমি বিনয়ের সাথে প্রিয় হাবিব ভাইকে বলবো, ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যার দ্বারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়া এবং অলৌকিকভাবে এরশাদ পতন আন্দোলনের ঐতিহাসিক পটভূমিতে হাবিব ভাইয়ের ভেতরে একধরনের অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। এই আত্মবিশ্বাস তাঁকে দিকভ্রান্ত করেছে। তিনি রাজনীতির সহনশীলতার পথ ডিঙিয়ে যখনই রাতারাতি প্রাপ্তির আশায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখনই সকল ভুলের সূত্রপাত। ভিন্ন দল থেকে গিয়ে দলীয় নেতাদের উপর আঘাত তাঁকে এক অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।
এছাড়া, যখন বিএনপির প্রধান দুই নেতার একজন কারাগারে অন্যজন একুশে আগস্ট সহ খুনের রাজনীতির ইতিহাসে নাম লিখে দেশান্তর, তখন বিএনপির জন্য ঝুঁকি নিতে আসার মতো নির্বোধ খুঁজে পাওয়ার কথা নয় তাঁর।
পরিশেষে বলবো, তাঁর মতো একজন অগ্রজ দেশের খ্যাতিমান একটি চ্যানেলে রাজনৈতিক আলোচনার ভেতরে থুথু নিক্ষেপ করে দেশবাসীকে হতাশ করেছেন। তিনি তাঁর নিজেকে অসম্মান করেছেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সকল ব্যর্থতার কারণ নির্ণয়ে দেশবাসীকে সহযোগিতা করেছেন।
কামনা করি তিনি সহনশীল হোউন। তিনি অনুতপ্ত হোউন।