শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার আসামী বিএনপি নেতা পিন্টু গ্রেফতার
বিশেষ সংবাদদাতা |
দিনাজপুরের উদ্দেশে যাওয়ার সময় ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৯ সালে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আত্মগোপনে যান তিনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ তিনি টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার হন। গতকাল রোববার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত শনিবার রাতে র্যাব-২ এর একটি দল টেকনাফ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাকারিয়া পিন্টুকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। তিনি ঈশ্বরদী সদরের পিয়াখালী এলাকার মৃত সামাদ গার্ড ওরফে আব্দুস সামাদের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আসামি র্যাবকে জানায়, পিন্টু প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে পৌঁছালে সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বগি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদীর জিআরপি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেয়া হলে তদন্ত কর্মকর্তা ৩ এপ্রিল ১৯৯৭ সালে মোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এর মধ্যে পাঁচ জন আসামি মৃত্যুবরণ করায় তাদের ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই গ্রেপ্তার জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
গ্রেপ্তারকৃত পিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব আরও জানতে পারে, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। রায় ঘোষণার পরের দিনই তিনি দেশ ত্যাগ করে ভারতে আত্মগোপন করেন। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর আবার দেশে ফিরে আসেন। পরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ঢাকা, রাজশাহী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন। সর্বশেষ টেকনাফে তার বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব-২ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পিন্টুর রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, যে সময় হামলার ঘটনা ঘটেছিল তখন পাবনা-কুষ্টিয়া অঞ্চলে ছিল সর্বহারা ও চরমপন্থিদের আধিপত্য। তবে মামলার ধরনে বলা যায়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ১৯৮৮ সাল থেকে তার সন্ত্রাসী হামলা কর্মকাণ্ড রয়েছে। তিনি ২০১৫ সালের ঈশ্বরদী অঞ্চলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন। র্যাবের ধারণা তিনি চরমপন্থি দলের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। বিশদ জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারে স্পষ্ট হওয়া যাবে।