ঢাকা অফিস।।
পৌষের শুরুতেই তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় জবুথবু হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল শৈত্যপ্রবাহ আরও জোরদার এবং বিস্তার লাভ করেছে। রাজশাহী-রংপুরসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা বিভাগ তথা মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলায় এবং সিলেট, ময়মনসিংহ মিলিয়ে দেশের অধিকাংশ এলাকা মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে। পার্বত্যাঞ্চলের আংশিক ছাড়া শুধু চট্টগ্রাম বিভাগে এখনও শৈত্যপ্রবাহের ধাক্কা পড়েনি তেমন। উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাটে পারদ নামলো ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা চলতি শীত মৌসুমে এ যাবত দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় মধ্যরাত থেকে ভোর এমনকি সকাল ৯টা পর্যন্ত পারদ গতকাল ছিল ৬ থেকে ১০-১১ ডিগ্রির আশপাশে।
আজ রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা হ্রাসের এবং শৈত্যপ্রবাহ দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। পশ্চিম, মধ্য, উত্তর-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের অনেক শহর-গঞ্জ গ্রাম-জনপদে ফল-ফসলের মাঠে-ঘাটে গুঁড়িবৃষ্টির মতো ঝিরঝির কুয়াশা পড়ছে। সেই সঙ্গে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বইছে হিমালয় পাদদেশ থেকে আসা হিমেল হাওয়া। এ অবস্থায় বিশেষ করে সমাজের অভাবী লোকজনের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। দিনমজুর ঠেলাগাড়ি-ভ্যানচালক কুলি, শ্রমজীবীদের আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে। তবে শীতের তীব্রতা যতই বাড়ে প্রকৃতির নিয়মেই খেজুরের রসের মিষ্টতা ততই বেড়ে যায়। এর ফলে গাছি রস বিক্রেতাদের হাঁকডাক ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগসহ টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা আরো সামান্য হ্রাস ও দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মাঝরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশা পড়বে হালকা থেকে মাঝারি। সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। এরপরের ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে ৬.৮, সৈয়দপুরে ৭, বদলগাছী ও চুয়াডাঙ্গায় ৭.৫, ঈশ্বরদী ও দিনাজপুরে ৭.৬, তেঁতুলিয়ায় ৭.৮, রাজশাহী ও যশোরে ৮, শ্রীমঙ্গলে ৮.১, বগুড়া ও ডিমলায় ৮.৫, রংপুরে ৮.৯, ময়মনসিংহ ও বরিশালে ৯, গোপালগঞ্জে ৯.১, কুমারখালীতে ৯.২, তাড়াশে ৯.৩, নেত্রকোনায় ৯.৫, ভোলা ও ফরিদপুরে ৯.৭, মাদারীপুরে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পারদ আগের দিনের চেয়ে স্থানভেদে এক থেকে ৩-৪ ডিগ্রি পর্যন্ত কমেছে। তবে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ২৪ এবং সর্বনিম্ন ১৩.৫, চট্টগ্রামে যথাক্রমে ২৫.৭ ও ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রায় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রায় তেমন হেরফের হয়নি।
বাতাসে এখনও কমবেশি জলীয়বাষ্প নিচু হালকা মেঘ ও কুয়াশায় মিশে ভাসমান ধুলোবালি ধোঁয়ার দূষণ অব্যাহত আছে। এ কারণে সর্দি-কাশি-জ্বর, হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট, গলাব্যাথা, টনসিল-সাইনাস, ফুসফুসে সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বায়ুমান সূচক (একিউআই) ও বায়ুদূষণ মাত্রা (পিএম ২.৫) ছিল আইকিউএয়ার’র পর্যবেক্ষণ তথ্য মতে শুক্রবারের মতো ১৮৭। যা অস্বাস্থ্যকর। বিশে^ সর্বাধিক বায়ুদূষিত প্রধান শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান পঞ্চম।
প্রায় সারাদেশে বাতাসের জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্পের হার ছিল ৫০ শতাংশ। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে।