ঢাকা অফিস।।
জীবন থেকে মুছে যাক বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি, দূর হয়ে যাক পুরাতন বছরের হতাশা-আবর্জনা। কবির ভাষায় “মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।” সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে সূচি করে তুলতেই প্রকৃতিতে আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ। আজ পহেলা বৈশাখ। পুরাতনকে ভুলে নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে আরো একটি বছর। সূচনা হবে নতুন বাংলা সাল ১৪২৮। শুভ নববর্ষ। বিদায় ১৪২৭, স্বাগত ১৪২৮। প্রতিবছর নববর্ষকে বরণ করতে নগরবাসীর থাকে নানা আয়োজন। শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্রই থাকে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান। বর্ষবরণের চিরায়ত রীতি হিসেবে ঘরে ঘরে থাকে পান্তা ইলিশের আয়োজন। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নববর্ষকে বরণ করে নিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন নগরবাসী। লাল, হলুদ, সাদাসহ বাহারি রঙের শাড়ী, আর পাঞ্জাবী পড়ে হাতে হাত রেখে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-শিশুসহ সব বয়সী মানুষ স্বাগত জানায় নতুন সূর্যোদয়কে। বদলে যায় রাজধানী ঢাকার দৃশ্যপট। শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলায় বর্ণাঢ্য হয়ে উঠে শহর।
কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। প্রাণঘাতি মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে লন্ডভন্ড অবস্থা সর্বত্রই। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে। মৃত্যুর সারিও দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ থেকেই সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। প্রায়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। পহেলা বৈশাখ উদযাপনে যেহেতে বিপুল সংখ্যম মানুষের সমাগম ঘটে এজন্য বাতিল করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রাও। এছাড়া প্রতিবছর বর্ষবরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানসহ সারাদেশে যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেগুলোও করা হয়েছে বাতিল।
এজন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙালিরা করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই কাল নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তেমন কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া। দেশে দ্বিতীয়বারের মত করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পয়লা বৈশাখসহ সবধরনের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে সংক্রমণ অনেক বেশি হওয়ায় গত বছরের মতো এবারও বর্ষবরণ উৎসবের উপর সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। একাত্তরের পর গত বছর নববর্ষের প্রখম প্রহরে রমনার বটমুলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান হয়নি। তারেই ধারাবাহিকতায় এবছরও থাকছে না ছায়ানটের নতুন বছরের বন্দনা। তবে, রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান থেকে ছায়ানট সরে আসলেও জানা গেছে এ উপলক্ষে নতুন কিছু গান রেকর্ড করা হয়েছে। নববর্ষের দিন সকালে এগানগুলোসহ সংগঠনের সভাপতি সনজীদা খাতুনের ‘কথন’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে স¤প্রচারিত হবে। বেসরকারি টেলিভিশন গুলোতেও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে।
এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল স¤্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনার শুরু হয়। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাঁদের পুরানো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তাঁরা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। তবে, এবছর মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানটি হচ্ছে না।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।#