নাটোরের ভাইরাল হওয়া কলেজ শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের রহস্যজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা
————-
চাঁচকৈড়, গুরুদাসপুর ও নাটোর থেকে ফিরে এস এম রাজা।।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহারের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। আজ ১৪ আগস্ট’২২ ভোর রাতে নাটোর শহরের বলারীপাড়াস্থ হাজী নান্নু মোল্লা ম্যানশনের চারতলা ভাড়া বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
মৃত খায়রুন নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় পৌর এলাকার খামার নাচকৈড় গ্রামের মো.খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। দাম্পত্য কলহের কারণে প্রায় ১৯ বছর আগে রাজশাহীর বাঘায় প্রথম বিয়ে হওয়া কলেজ শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের মাত্র ৪ বছরের দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। উভয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এই স্বল্প সময়ের সংসার জীবনে তাদের ২টি ছেলে সন্তান জন্মলাভ করে। বড় ছেলে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। ছোট ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষার্থী। প্রথম স্বামীর সংসার ভেঙে যাওয়ার পর থেকে সে তার বাবার কিনে দেয়া বাড়িতেই অবস্থান করেই শিক্ষকতা করতেন। গত দুই আড়াই বছর আগে ফেসবুকে মামুনের একটি পোস্ট দেখে খায়রুন নাহার আকৃষ্ট হয়ে যোগাযোগ ও সম্পর্ক গড়ে তোলে। অবশেষে ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে, নাটোরের নবাব সিরাজ- উদ-দৌলা সরকারি কলেজের ডিগ্রী ২য় বর্ষের ছাত্র মামুনের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এই বিয়ের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। তাদের বিয়ের বিষয়টি মামুনের পরিবার মেনে নিলেও খায়রুন নাহারের বাবা-মা সহ পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারেনি। সে
কারণেই মামুন এবং নাহার নাটোরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বিয়ের পর তারা দুজনেই গণমাধ্যমকে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক কথা বললেও খায়রুন নাহারের মৃত্যু নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিবেদক নাটোর,গুরুদাসপুর এবং চাঁচকৈড়-এর একাধিক ব্যক্তিদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা উল্লেখিত তথ্যসমূহ সহ আরো বলেছেন, মামুন মাদকাসক্ত। নাহারও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ভেতরে ভেতরে উভয়ের মধ্যেই নানা বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝিও সৃষ্টি হয়েছিল। নাহারের আকষ্মিক এই মৃত্যু ভুল বোঝাবুঝিরও পরিণতি হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। নাটোর থানা, ঘটনাস্থল ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজ ১৪ আগস্ট’২২ ভোরে
মামুন ভবনের অন্য বাসিন্দাদের ডেকে জানায়, তার স্ত্রী খায়রুন নাহার ভোর রাতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। এই সংবাদ শুনে তারা মামুনের রুমে গিয়ে মেঝেতে শুয়া অবস্থায় নাহারের লাশ দেখতে পায়। এই সময় লোকজনের সন্দেহ হলে মামুনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে নাটোর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাছিম আহমেদ ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে মামুনকে গ্রেফতার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশের সুরতহাল সম্পন্ন শেষে মর্গে প্রেরণ করে। এদিকে ভাইরাল হওয়া প্রেমিক জুটির মাত্র ৮ মাসের সংসার জীবনে এমন দূর্ঘটনা কেউ স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছে না। নাহারের মৃত্যুকে রহস্যজনক বলেই উল্লেখ করছে সবাই। এটি পরিকল্পিত হত্যা নাকি আত্মহত্যা এই প্রশ্ন কম বেশি সকল মহলেই। পুলিশ বলছে, খায়রুন নাহারের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে ব্যাপক ভাবে তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে সবই জানা যাবে। তবে আত্মহত্যা বলে মনে হলেও এর কারণ অনুসন্ধান করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।