করোনাকালিন দেড় বছরে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে। এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের হারও বেড়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে নারীদের পক্ষ থেকে। এ তথ্য দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’। কিন্তু কেন এই বিচ্ছেদ, এর নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। তিনি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে জাতীয় লিগ্যাল এইড ভূমিকা পালন করতে পারে।
গতকাল শনিবার ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজড করার মধ্য দিয়ে বিগত দেড় বছর আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিচার সেবা প্রদান করেছি। এ ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনেককে আইনি সহায়তা দিয়েছে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইনি সহায়তার বিষয়ে আমাদের আরও অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। তবে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এসব কাটিয়ে উঠে আমাদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য প্রযুক্তির প্রসার বাড়াতে লক্ষ্য রাখতে হবে। করোনাকালে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রযুক্তির ব্যবহার করে যে লিগ্যাল এইড সুবিধা দেয়া হয়েছে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে।
লিগ্যাল এইডের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান আরও বলেন, আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরে সমৃদ্ধ হলাম যে, করোনায় গত দেড় বছরে কী ধরণের পারিবারিক সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও আরও কিছু ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্যতার কারণে মানুষের দারিদ্রতা বেড়েছে। আয় কমেছে, এজন্য পারিবারিক সহিংসতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দেড় বছরে যৌতুকসহ পারিবারিক সহিংসতা এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী কর্তৃক হয়েছে। এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন। জাতীয় লিগ্যাল এইড এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে।
জাতীয় লিগ্যাল এইডের কর্মক্ষেত্রের পরিধি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, স্বামী পরিত্যক্তা বা ধর্ষণের শিকার ভিকটিমদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীকে সঙ্গে সঙ্গে সহযোগিতা না করার ফলে অনেক সাক্ষ্য ও আলামত নষ্ট হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের দ্রুত মেডিকেল সুবিধা প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এভাবে লিগ্যাল এইডকে ভাবতে হবে। আইনি সহায়তার জন্য লিগ্যাল এইডকে দেশের উপজেলা ও থানা পর্যায়ের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এভাবে নিজেদের পরিষেবা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে তাদেরকে আইনি সেবা দিয়ে যেতে হবে। ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।