দেশের তিন জেলায় বিএনপি-আ.লীগ-পুলিশের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক, আটক ১২
গ্যাস-বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলা ও মহানগর বিএনপি পৃথকভাবে অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে। গতকাল বিএনপির এ অবস্থান কর্মসূচির পথসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের সময় রাজশাহী ও খুলনায় পুলিশ-বিএনপি, নাটোরে আ’লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। রাজশাহী পুলিশ বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। আমাদের ব্যুরো ও জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে খবর বিস্তারিত :
রাজশাহী ব্যুরো জানায় : রাজশাহীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির পথসভা ও বিক্ষোভ মিছিলে দুই দফা লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাইদ চাঁদসহ ৭জনকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে এবং পৌনে ৪টার দিকে গণকপাড়া মোড়ে পুলিশের লঠিচার্জে অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা জানান।
বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহারয়ার্দী হোসেন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীর অবস্থান কর্মসূচির অনুমোদন ছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভূবন মোহন পার্কে। কিন্তু তারা অনুমোদিত স্থানের বাইরে গিয়ে কর্মসূচি পালন করায় তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। পুলিশের নির্দেশনা অমান্য ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে ৭জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলো- পবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, চারঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মৃধা, শলুয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক বিএনপি নেতা এমদাদুল হক, বাঘা উপজেলার হরিরামপুর এলাকার স্বপন, বাগমারার রামরামা গ্রামের মুনির হোসেন, গোদাগাড়ীর আমিনুল ইসলাম।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পদাক ও আহবায়াক কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তাফা মামুন জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে পথ সভা শুরু করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ। পথসভা শুরুর পর পরই পুলিশ লাঠি চার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরে তারা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে গণকপাড়া মোড়ে আসলে সেখানে দ্বিতীয় দফায় লাঠিচার্জ করা হয়। এতে বিএনপি নেতারা ছত্রভঙ্গ হয়ে দলীয় কর্যালয়ে চলে যায়। পরে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার নিন্দা জানায় বিএনপি নেতারা।
গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, পুলিশের লাঠিচার্জ ও দৌড়াদৌড়ির সময় পড়ে গিয়ে তিনিসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
খুলনা ব্যুরো জানায় : গতকাল বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন । ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষের পর পুলিশ নগরীর কেডিঘোষ রোডের বিএনপির অফিস ঘেরাও করে রাখে। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ শতাধিক নেতাকর্মী আটকা পড়েন। এদিকে, এ ঘটনার পর বিকেল ৪টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেছে বিএনপি। প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপি’র তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল।
প্রেসব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ১০ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার দুপুর ২টায়
নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয় চত্বরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ছিল। খুলনা থানার সামনে দিয়ে একটি খন্ড মিছিল এই কর্মসূচিতে আসার সময় পুলিশ তাদের বিনা কারণে বাঁধা দেয় এবং লাঠিচার্জ করে। তখন পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পুলিশের হামলায় বিএনপির ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। কর্মসূচির আগের রাতে খুলনায় পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব মো. মিজানুর রহমান মিল্টন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবাদুল হক রুবায়েত, মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরি হাসানুর রশিদ মিরাজ, নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইশতিয়াক হোসেন ইস্তি ও রূপসা উপজেলা ছাত্রদল নেতা ইমতিয়াজ আহমেদসহ ১২ জন আহত হয়েছে। এরা সবাই পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন। সম্পুর্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, গতকাল শনিবার বিএনপি’র একটি প্রোগ্রাম ছিল। আমরা এখানে অবস্থান করছিলাম যাতে শান্তিশৃঙ্খলায় বিঘœ না ঘটে। কিন্তু হঠাৎ করে বিএনপির দু’টি মিছিল দুইদিক থেকে এসে শ্লোগান দিতে থাকে। এদের মধ্যে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেরা হঠাৎ করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারা শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হই। তাদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কর্মসূচির নামে কাউকেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না।