টাকাকে আর কাগজের মুদ্রায় দেখতে চাই না: মোস্তাফা জব্বার
মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) জনপ্রিয়তা পাওয়ায় আগামীতে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, টাকাকে আমরা আর কাগজের মুদ্রায় দেখতে চাই না। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর বিধিবিধানগুলোও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তারাও এখন পুরোনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করছে এবং উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এখন এমএফএস অপারেটরগুলোর মধ্যে আন্ত:লেনদেন বা ইন্টারঅপারেবিলিটির ব্যবস্থা করে তাহলে মানুষের জীবন আরও সহজ হবে এবং এমএফএস সেবা গ্রহণযোগ্যতা পাবে সাধারণ মানুষের কাছে।
শনিবার টেলিটকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘ভাতা বিতরণে মোবাইল প্রযুক্তি: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত দেশের এমন কেউ নেই যে ডিজিটাল সেবার উপকার পাননি। এখন চাইলেই মানুষ যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো কারও সাথে যুক্ত হতে পারছেন। করোনাকালে দেশের দুর্গম অঞ্চলে সরকার নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণ করেছে। এখন সরকারি যেসব ভাতা, সবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে ভাতাভোগীর হাতে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে এমএফএস অপারেটরগুলো।
ডাক বিভাগের মাধ্যমে তৃণমূলে সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, তৃণমূলের কৃষকরাও যাতে ডাক সেবা নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে, কারণ ডাক বিভাগের মত এতবড় নেটওয়ার্ক কারো নেই। চলতি বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন উচ্চগতির ইন্টারনেটের আওতায় আসবে বলেও জানান টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল, আমরা যেন নির্বিঘেœ সমাজিক নিরাপত্তা ভাতা দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এটি করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, আর্থিক খাতে ডিজিটালাইজেশন না করা গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশের সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জিত হবে না এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় না আনা গেলেও লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব হবে। ‘নগদ’-এর কারণেই সরকারি ভাতা ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন এসেছে এবং তালিকায় থাকা ভুয়া গ্রাহকদের বাদ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এমটব-এর সাবেক মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, আমাদের জার্নি হচ্ছে ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে। প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে প্রযুক্তির ধারায় নিয়ে আসা একটি সফলতা।
বেসিস সভাপতি আলমাস কবির বলেন, ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার একটি বড় সুফল হলো এমএফএস।
টিআরএনবি’র সভাপতি রাশেদ মেহেদী’র সঞ্চালনায় সরকারি ভাতা বিতরণে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ভূমিকা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গত বছর ঈদের আগে যে ১৬ লাখ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দেওয়া যায়নি বলে হিসেব এসেছে সেগুলো ছিল ভুয়া নাম। ডিজিটালাইজেশনের কারণেই সেবা বিতরণে সরকারের ৩৮৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। প্রাথমিকের ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণ করছে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের মায়ের মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হয়েছে। আগে উপবৃত্তির টাকা পাঠাতে সরকারের খরচ হতো প্রতি হাজারে ২২ টাকা, এখন সেখানে খরচ হচ্ছে ৭ টাকা। সরকারের অর্থেরও সাশ্রয় হয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে মাত্র তিন মাসে চার প্রান্তিকের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা ‘নগদ’ এর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪০ লাখ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণ করছে বেসরকারি এমএফএস অপারেটর বিকাশ। ৩০০ কারিগরী ও মাদরাসা এবং আট হাজার শিক্ষক-কর্মচারী-ছাত্রকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে। একইভাবে সরকার ‘নগদ’ এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি- ভিজিএফ বিতরণের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমেও সফলতা পেয়েছে বলে মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়।