দেওয়ান সবুজ, ঈশ্বরদী (পাবনা): বিভিন্ন জীবজন্তুর উৎপাত থেকে ফসল বাঁচাতে অনেক সময় বৈদ্যুতিক ফাঁদ ব্যবহার করার দৃশ্য দেখা যায়। তবে এবার সুপারী বাঁচাতে মানুষ মারার বৈদ্যুতিক মরণ ফাঁদ ব্যবহারের দৃশ্য চোখে পড়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। আর মরণঘাতী এ ফাঁদ ব্যবহার নিয়ে আপন দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারি ও ভাতিজা কে জেল হাজতে পাঠানোর মত তুলকালাম ঘটনাও ঘটেছে। গত শনিবার (১৫ মার্চ) ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর উত্তরপাড়া গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, পৈত্রিক সূ্ত্রে পাওয়া জমির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের মৃত ইউসুব আলীর ছেলে আলাল উদ্দীন ও জালাল উদ্দীনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে পাবনা আদালতে একটি মামলাও রয়েছে। সাম্প্রতিক মামলাধীন ওই জমিতে চাষ করা সুপারী গাছের সুপারী পাড়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে আবারো বিরোধ হয়। এদিকে আলাল উদ্দীন যেন সুপারী পারতে না পারে এজন্য জালাল উদ্দীন বাগানের সুপারী গাছগুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে মরণ ফাঁদ তৈরী করেছে। বেশ কিছুদিন আগে আলাল ও তার ছেলে আব্দুল আলিম ওই বাগানে সুপারী পাড়তে গেলে বৈদ্যুতিক লাইনে আটকে যায়। এ নিয়ে আবারো দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
তবে জালাল উদ্দিন নিজে এমন মরণ ফাঁদ তৈরী করলেও উল্টো আলালউদ্দীন ও তার স্ত্রী, ছেলেসহ পাঁচ জনকে আসামী করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পরে পুলিশ গিয়ে আলাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল আলিম কে আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। এদিকে বৈদ্যুতিক লাইন দিয়ে এমন মরণ ফাঁদ তৈরী করা নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আলাল ও জালালের আপন বোন, বোনজামাই সহ স্থানীয়রা এমন কাজের নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেন জালাল উদ্দীন ভাইবোনের সম্পত্তি একাই দখল করে রাখতে চান। আপন ভাইকে মারার জন্য তিনি এমন ফাঁদ তৈরী করেছিলেন।
এবিষয়ে আলাল উদ্দিন জানান, হত্যার উদ্দেশ্যে আমার আপন ভাই জালাল উদ্দিন সুপারী বাগানে বৈদ্যুতিক মরণফাঁদ তৈরী করেছিলো। অথচ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ উল্টো আমার ছেলেকে ধরে হাজতে পাঠিয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এদিকে জালাল উদ্দিন বলেন, কাউকে মারার উদ্দেশ্যে নয়, বরং ভয় দেখাতেই শুধু বৈদ্যুতিক তার টেনেছিলাম, এতে বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিল না। কিন্তু এ নিয়ে বাকবিতন্ডায় এক পযার্য়ে আমার ভাই ও ভাতিজা আমার ছেলেকে মেরে রক্তাক্ত যখম করেছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, যেহেতু জমির ওপর আদালতে মামলা রয়েছে এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের কোন করণীয় নেই। তবে ফসলি জমিতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরির কাজটি নিন্দনীয়, যা কোনভাবে কাম্য নয়। ঈশ্বরদী থানার উপ পরিদর্শক ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল হুদা জানান, সুপারি পাড়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মারামারির বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একজনকে আটক করে হাজতে পাঠানো হয়েছে।