যুব উন্নয়ন কার্যালয়ে আসা একাধিক মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের \ পদক্ষেপ নিতে জেলা কর্মকর্তাকে ইউএনওর অনুরোধ \ অভিযোগ প্রত্যাহারে নেতাদের মাধ্যমে ভুক্তভোগির পরিবারকে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি।।
পাবনার ঈশ্বরদীতে যুব উন্নয়ন কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ ও ঋণ নিতে আসা, ঋণের কিস্তির টাকা জমা দিতে আসা এবং এই কার্যালয়ের সামনের অন্যান্য কার্যালয়ে আসা একাধিক মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেওয়া, প্রলোভন দেখিয়ে অপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে বিয়ে করাসহ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের (৫৮) বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নানা রকম প্রলোভনসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে বাসায় ডাকায় অতিষ্ট হয়ে উঠেন ওই মেয়ে। অবশেষে গত ২৪ মার্চ/২৪ উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল কলেরখাদ এলাকার ওই মেয়ে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা প্রশাসনের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে উল্লেখ করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাবনা জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে (উপ-পরিচালক) অনুরোধ জানিয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ। বিষয়টি নিয়ে চরমভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ায় ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়টি চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাবনা জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে (উপ-পরিচালক) স্বপন কুমার কর্মকার। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে ভুক্তভোগি পরিবারসহ ওই মেয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদসহ পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক নারী কেলেংকারির ঘটনাগুলো নিয়ে নতুন করে সমালোচনা চলছে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি/২০২৪ সালে ওই মেয়েটি তার এক সহপাঠিসহ ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থাকা উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার আইডি কার্ডের ফরম জমা দিতে যান। এই সময় যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সুকৌশলে তাদের ডেকে নানা রকম কথাবার্তা জিজ্ঞাসা করেন। এই পর্যায় চাকরী দেওয়ার কথা বলে ওই মেয়ের মোবাইল নম্বর নেন। এরপর থেকেই কথাবার্তা বলা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ওই মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেন। বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সময় কাটানোর কথা বলেন। অবশেষে অসহায় হয়ে মেয়েটি ঘটনাটি পরিবারকে জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের সঙ্গে ভুক্তভোগি মেয়েটির মধ্যে কথপোতনের প্রাপ্ত কল রেকর্ড সুত্রের বরাত দিয়ে ভুক্তভোগির পরিবার জানান, একটা ছোট মেয়েকে চাকরীর প্রলোভন দিয়ে বাবার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষ এভাবে খারাপ প্রস্তাব দিতে পারে। এটা ভাবায় যায় না। নানা রকম প্রলোভন দিয়ে এর আগেও অনেক মেয়েকে ফাঁসিয়েছেন মোরশেদ আহমেদ। উপজেলার সাহাপুর ফকির পাড়া এলাকার এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন মোরশেদ আহমেদ। কয়েক দফা সেই বাড়িতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়েছেন। পরে লোকজন তাদের বিয়ে দিয়ে দেয় বলে জানা গেছে। এভাবে চলতে থাকলে যুব উন্নয়নের মাধ্যমে প্রশিক্ষিণ নিতে তো কোন মেয়েই যাবে না। আমরা নৈতিক চরিত্র স্খলনকৃত কর্মকর্তার শাস্তির দাবীতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে আমাদের উপর চাপ দেওয়ানো হচ্ছে বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে ও যুব উন্নয়ন কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি/২০১১ সালে মোরশেদ আহমেদ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে ঈশ্বরদীতে যোগদান করেন। এরপর থেকেই কার্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে ঢাকাতে চাকরী বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা, মাসে দুই এক বার এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, প্রশিক্ষণভাতা, ঋণের টাকা আত্মসাত, অফিস কর্মচারীদের সঙ্গে শালিন আচরণ, প্রশিক্ষণ নিতে আসা মেয়েদের বাড়িতে যাওয়া, সখ্যতা গড়ে তোলা, কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ নানা রকম অভিযোগে বেশ কয়েক দফা অধিদপ্তর থেকে তদন্তও এসেছিল। তদন্তে সব অভিযোগ প্রমানিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি অধিদপ্তর। আর এসব কারণেই বারবার মেয়েদের সঙ্গে এত নোংরামি করে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তা। ফলে অফিস স্টাফরাও অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদ কর্তৃক একটি মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের কথা শুনেছি। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই বিষয়টিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাবনা জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে (উপ-পরিচালক) পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
পাবনা জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে (উপ-পরিচালক) স্বপন কুমার কর্মকার বলেন, ছেলে মেয়েদের বেকারত্ব দূর করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। সেখানে একজন কর্মকর্তা কর্তৃক মেয়েদের সঙ্গে এরকম অশালিন আচরণ, কূরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি জানার পর একজন সহকারী পরিচালককে দিয়ে তদন্ত করিয়েছি। এখন ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের বিষয়ে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদ বলেন, আমার সঙ্গে মেয়েটির সুসম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের সুত্র ধরে মোবাইল অনেক কথায় হয়েছে। মেয়েটি আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে। জানতে পেওে, স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এই নিয়ে আর লেখালেখি করার দরকার নেই।
এর আগেও এভাবে মেয়েদের নানা রকম প্রলোভন দিয়ে ফাঁসানোর বিষয়ে মোরশেদ আহমেদ জানান, আমি আগের মেয়েটিকে বিয়ে করেছি। সে আমার স্ত্রী। সেই বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না। তবে নতুন করে আবার কেন শুরু করেছেন, জানতে চাইলে মোরশেদ আহমেদ কৌতুক করে বলেন, একটা মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বললে যা হয় আর কি ? ###