#ঈশ্বরদীতে চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ কর্মী মনা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর কারখানার সন্ধায় পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ১২ আসামীকে গ্রেপ্তারসহ ঘটনাস্থলে পরে থাকা গুলির খোসা, দুইটি ওয়ান শুটার গান এবং এক রাউন্ড তাজা কার্তুজ, একটি বিদেশি পিস্তল এবং এক রাউন্ড তাজা গুলি, হত্যাকান্ডের সময় আসামীদের ব্যবহৃত পোশাক এবং হেলমেট একটি প্রাইভেট কার, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর বিপুল সরঞ্জামাদী উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পাবনা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি।
পুলিশ জানায়, নিহত তাসফির আহম্মেদ মনা (গত ১৭ জুন) রাত সোয়া ১০ টার সময় লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের পাকুড়িয়া এমপি মার্কেটে ইকবুলের অফিসে আড্ডা দেওয়ার সময় ৩ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের শ্রমিকদের এ্যাপ্রোন ও হেলমেট পরে মোটর সাইকেলযোগে এসে মনাকে ৫/৬ রাউন্ড গুলি করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী মনার মা নাহিদা আক্তার লিপি বাদী হয়ে ১৯ জুন ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ও ডিবির যৌথ চেষ্টায় প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় হত্যাকান্ডের অন্যতম মূলহোতা এবং হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী আসামী অনিককে
গ্রেফতার করে । পরে অনিকের দেওয়া তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা, গাজীপুর, কুষ্টিয়া এবং পাবনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী আসামী মানিক সহ আরও ০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় মানিক ও অনিকের ভাড়া বাসায় (ঈশ্বরদী জিগাতলা এলাকা) অভিযান পরিচালনা করে ১ টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর কারখানার সন্ধান সহ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম এবং ০৩ টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
আসামীদের দেওয়া তথ্য মতে কারখানাটিতে অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করা হতো যা পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠনে ব্যবহার এবং অস্ত্র ব্যবসা করা হতো। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত শ্রমিকদের এ্যাপ্রোন ও হেলমেট (নিকিম কোম্পানির) ঈশ্বরদী শহর হতে বাইপাস গামী পাকা রাস্তার পাশে আখ ক্ষেত হতে উদ্ধার করা হয়। আসামিদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জানা যায় যে, আসামিদের সাথে ভিকটিমের পরিবারের দীর্ঘদিনের শত্রুতা, চাঁদাবাজি এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। এক নিখুঁত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে মনা হত্যা।
ঘটনার দিন আগে থেকেই মনা সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল মনিরুল এবং আরিফ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাত ১০.১৫ ঘটিকার দিকে মোটরসাইকেলে করে মানিক, অনিক এবং অজ্ঞাত ১ জন এমপি মার্কেটে এসে ট্রাক-লড়ি শ্রমিকের ঘরে বসে থাকা অবস্থায় মনাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ব্যাক আপ পার্টি হিসেবে ৫/৬ জন আসামী ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান নেয়। এসময় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ কারী ৩ জন মোটরসাইকেল করে নতুন হাটে যায় এবং সেখানে আগে থেকেই অবস্থানকারী আসামী শাহীন এর প্রাইভেট কারে উঠে ঈশ্বরদী বাইপাস রোডে আখ ক্ষেতে নিকিম কোম্পানির পোশাক এবং হেলমেট ফেলে দিয়ে জিগাতলার ভাড়া বাসায় ফেরত আসে। ঐ রাতেই আনুমানিক ১২.৩০ মি: এর দিকে মানিক, অনিক এবং শাহীন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরবর্তীতে ঈশ্বরদী থানাধীন জয়নগর এলাকা হতে উক্ত প্রাইভেট কার টি উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীরা হলেন, ঈশ্বরদী উপজেলার নতূন রুপপুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে মানিক (৩৬), দিয়ার সাহাপুর গ্রামের মহিদুল হকের ছেলে ফসিউল আলম অনিক (২৭), নতুন রুপপুর গ্রামের আতিয়ারের ছেলে চমন (৩৮), চরসাহাপুর গ্রামের আক্তার সরদার ছেলে শাহিন সরদার (২৮), নতুন রুপপুর গ্রামের আজিজের ছেলে রাজিব (৩০), চররুপপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৩২), শাহাজান আলীর ছেলে অবুঝ (৩৭), চড় রুপপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম (৩৪), লক্ষ্মীকুন্ডার মাহফুজুর রহমান কালা (৩৫), চর রূপপুর গ্রামের বাবলু এর ছেলে লিখন ফারুক আহমেদ (৩৭), চর রুপপুর (জিগাতলার) মৃত গফুর মালিথা ছেলে সানোয়ার মালিথা (৪০), রুপপুর ফটু মার্কেট এলাকার এনাম বিশ্বাসের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান রকি। অভিযুক্ত এসব আসামীদের বিরুদ্ধে পিসিপিআর এ ৫-১১ টি করে মামলা রয়েছে।