২৬ মার্চের মধ্যে মামলার দৃশ্যমান গতি না হলে কর্মসুচির ঘোষণা-মুক্তিযোদ্ধাগণ
বীরমুক্তিযোদ্ধা সেলিম হত্যা মামলার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে-পিবিআই
ঈশ্বরদী ( পাবনা) প্রতিনিধি।।
পাবনা ঈশ্বরদীর রুপপুরের বহুল আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান সেলিম (৬৭) হত্যা মামলাটি চলতি মার্চের ২৬ তারিখের মধ্যে তদন্তে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না দেখা গেলে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে শহরকে স্তবির করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা।
রোববার(৩ মার্চ) দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার ব্যানারে ঈশ্বরদী শহরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম হত্যার বিচারের দাবীতে পালিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্যকালে মুক্তিযোদ্ধারা এই ঘোষণা দেন।
আর মামলাটির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন ( পিবিআই) পাবনা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মতিয়ার রহমান জানালেন, মামলাটি সর্বচ্চোগুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। মামলাটি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে চুড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
মামলা সুত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক পনে ৯টার দিকে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান সেলিম রূপপুর বিবিসি বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নিজ বাড়ির দরজার সামনে দূর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে তিনি মারা যান। পরের দিন নিহত সেলিমের ছেলে তানভির রহমান তন্ময় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামীয় আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সুত্র মতে, ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতে ঈশ্বরদী-পাকশীর চলমান আওয়ামী রাজনৈতিক, পাকশী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহনের কারণে কৃষককের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দকৃত ২৮ কোটি টাকা প্রদানের জন্য প্রস্তুতকৃত কৃষক ও মৎস্যচাষীদের নামের ঘোষিত তালিকাসহ রাজনৈতিক বেশকিছু কারণে দূর্বৃর্ত্তদের গুলিতে নিজ বাড়ির দরজার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান সেলিম। মুক্তিযোদ্ধা সেলিমের হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার এবং হত্যার রহুস্য উদঘাটনের দাবীতে সেই সময় মহাসড়ক অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ-সমাবেশ, মানববন্ধন, রেলপথ অবরোধ করাসহ প্রায়ই প্রতিবাদ সভা সমাবেশ করা হয়। উত্তাল হয়ে উঠে রুপপুর, পাকশীসহ গোটা ঈশ্বরদী। হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য কয়েক দফা আল্টিমেটামও দেয়া হয়। সেই সময় পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ এনামুল হক বিশ্বাসের ছেলে রকি, ভাতিজা আব্দুল্লাহ আল বাকি আরজু বিশ্বাস, প্রতিবেশি লিখনসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু তাদের নিকট থেকে সেলিম হত্যার তথ্য বেরসহ রহুস্য উৎঘাটনে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ফলে সেলিম হত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতারে দৃশ্যমান কিছু দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার দাবী করে থানা পুলিশের ভুমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়।
নিহত মুক্তিযোদ্ধা সেলিমের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা পাকশী সংসদের কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সেলিমের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও হত্যার মুল রহুস্য উৎঘাটনে সেই সময় থানা পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। ফলে তখন মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন ( পিবিআই) মাধ্যমে তদন্তের দাবীতে মুক্তিযোদ্ধা পাকশী কমান্ড ও এলাকাবাসী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পুলিশের মহা পরিদর্শক ( আইজিপি), পুলিশের অতিরিক্ত মহা পরিদর্শক ( ডিআইজি) সহ বিভিন্ন দপ্তরে গণ স্বাক্ষরিত স্বারকলীপি প্রদান করা হয়। এরপর ২৫ জুলাই/১৯ দিকে মামলাটির তদন্তভার পায়
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন ( পিবিআই)।
এদিকে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী আটঘরিয়ার) আসনের সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাস, বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ রশিদুল্লাহ, বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা চান্না, বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হব্বুল, বীরমুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। কর্মসূচিতে কয়েকশত বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন স্তরের জনগন উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন।
মামলাটির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন ( পিবিআই) পাবনা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মতিয়ার রহমান জানান, শুরুর দিকে মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান সেলিম হত্যা মামলাটিকে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে খুবই খারাপ অবস্থায় ফেলা হয়েছিল। কিন্তু মামলাটি পিবিআইতে আসার পর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদানের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে। ###