ঈশ্বরদীতে ‘অদৃশ্য’ ঘটনায় থানায় মামলা,
এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার ॥
পাবনার ঈশ্বরদীতে ‘অদৃশ্য’ ঘটনায় থানায় মামলা রেকর্ড হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সকালে ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের নিকড়হাটা রেলগেট মোড়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর আয়োজনে এসব কর্মসূচী পালন করা হয়। অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ জাহিদ হোসেন তাঁরা মালিথা। তিনি বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে নিকরহাটা গ্রামের লিটন আলী, পিতা লৈমদ্দিন এর উপর হামলা, ভাংচুর ও তার দোকান দোকান থেকে টাকা লুটের একটি মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে তার স্ত্রী মোছাঃ সাদিয়া ইয়াসমিন (২৫) ঈশ্বরদী থানায় একটি মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যে প্রনোদিত মামলা দায়ের করেন। যার নাম্বার- ৪৮, তাং- ৩০/০৯/২০২২। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, ওই দিন বা তার আগে ও পরে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখিত কোন ঘটনা এই নিকড়হাটা মোড়ে ঘটেনি। যা সঠিত তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে।
ভুক্তভোগী নুর জামাল মোল্লা বলেন, এই নিকরহাটা গ্রামের কমেদ আলী মোল্লার নাবালিকা মেয়ে মোছাঃ শ্রাবনী খাতুন (১৫) কে গত ২৫ আগষ্ট জোরপূর্বকভাবে অপহরন করা হয়। সেই ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর আসামী পক্ষ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে মামলার বাদী কমেদ আলী মোল্লা, স্বাক্ষী জুয়েল ও শহীদুল এর উপর হামলা করে বেধড়ক মারপিট ও এলোপাথারী কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। সে সময় আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে গেলে শুকুর আলী মোল্লাকেও মারপিট করে আহত করা হয়। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শুকুর আলী বাদি হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় এলাকার সিদ্দিক সরদার, লিটন সরদার, শের আলী, রফিকুল ইসলাম, আকাশ, সাব্বির, রাব্বি ও আসলাম মন্ডলকে আসামী করা হয়। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১নং আসামী সিদ্দিক সরদারকে গ্রেফতার করে। সেই সময় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সমঝোতার প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী বাদী শুকুর মোল্লাসহ বাদী পক্ষ, আসামী পক্ষ এবং গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে আসামী সিদ্দিক সরদারকে থানা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য। কিন্তু থানায় কাজ না হওয়ায় আদালতেও বাদীসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত হলে আদালত সিদ্দিক সরদারের জামিন মঞ্জুর করেন। সেই সময় উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এলাকায় যখন সমঝোতা প্রক্রিয়া চলছে ঠিক সেই সময় গত ৩০ সেপ্টেম্বর আসামী লিটন সরদারের স্ত্রী সাদিয়া ইয়াসমিন বাদী হয়ে সম্পূর্ন্য মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে এলাকার মোল্লা বংশের ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ঈশ্বরদী থানায় একটি মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যে প্রনোদিত মামলা দায়ের করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে কোন রকম প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই ঈশ্বরদী থানা পুলিশ এ রকম একটি মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যে প্রনোদিত মামলা গ্রহণ করেছে। যা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি।
বাজার সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন জানান, সাদিয়া ইয়াসমিনের দায়েরকৃত মামলায় নিকরহাটা রেলগেটে তার স্বামী লিটন সরদারের দোকানে হামলা, ভাংচুর ও দোকান থেকে ১,৮০,০০০/= ও একটি দামী মোবাইল ফোন এবং ভাগিনা আকাশের কনফেকশনারীর দোকানেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর, মালামাল তছনছ করে দোকানে থাকা ৩,৬০,০০০০/= লুট করে নেওয়ার অভিযোগ সত্যিই হাস্যকর। ওই দিন এই নিকরহাটা মোড়ে এ ধরণের কোন ঘটনায় ঘটেনি। আর যেই দুটি দোকানে হামলা, ভাংচুরসহ ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লুটের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেই দোকান দুটিতে মাত্র ৪০ হাজার টাকার মালামাল রয়েছে কি না? যা সঠিক তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।
ভুক্তভোগী মোঃ নুর জামাল মোল্লার সভাপতিত্বে আয়োজিত কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় বাজার সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, আইনুল হোসেন, শিক্ষক আঃ কাদের, বাদশা মোল্লা, কফিল মোল্লা, আজিবার রহমান, আকমল সরদার ও উকিল মোল্লা প্রমূখ। পরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নিকড়হাটা মোড়ে সকল ব্যবসায়ী, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
যোগাযোগ করা হলে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, এটি একটি কাউন্টার মামলা। মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পর প্রাথমিক ভাবে তদন্ত করা হয়েছে, আরও গভীরতর তদন্ত করা হচ্ছে। যদি এরকম কোন না ঘটে তবে ফাইনাল রিপোর্ট থেকে আসামীদের নাম বাদ দেওয়া হবে।