স্টাফ রিপোর্টার |জীবন থেকে মুছে যাক বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি, দূর হয়ে যাক পুরাতন বছরের হতাশা-আবর্জনা। কবির ভাষায় “মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।” সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে মুছে, আকাশÑবাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে সূচি করে তুলতেই প্রকৃতিতে আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ। আজ পহেলা বৈশাখ। পুরাতনকে ভুলে নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে আরো একটি বছর। সূচনা হবে নতুন বাংলা সাল ১৪২৯। শুভ নববর্ষ। বিদায় ১৪২৮, স্বাগত ১৪২৯। করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুইবছর পর, রাজধানীসহ সারা দেশে এবার বর্ণিল আয়োজনে হচ্ছে বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদযাপন। ইতোমধ্যে এর প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রত্যুষে রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন, আর সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে বরণ করা হবে বাংলা বছরের প্রথম দিন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলা নববর্ষ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এবার বর্ষবরণে রাজধানীর পাশাপাশি দেশব্যাপী বর্ণিল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (অনুষ্ঠান) এ জে এম আব্দুল্যাহেল বাকী জানান, এবার ছায়ানটকে রমনার বটমূলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে, বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া বর্ষবরণের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা (নববর্ষ ও বঙ্গবন্ধু), সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করা হবে। নববর্ষের ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে সুসজ্জিত করা হবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নগরের কেন্দ্রস্থল। ছায়ানটের সমন্বয়ক রশীদ আল হেলাল জানান, আমাদের বর্ষবরণের এবারের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’। এর উপর ভিত্তি করে পুরো অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে। শুরুতে ভোরের বিভিন্ন রাগের ওপরে যন্ত্রসঙ্গীত ও কন্ঠে একক এবং সম্মেলক গান পরিবেশিত হবে। এর আগে বেহালা, সেতার, বাঁশি ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে। এরমধ্যে উল্লেখিত প্রতিপাদ্যের উপর ভিত্তি করে একক ও সম্মেলক গান এবং অন্যান্য গান ও কবিতা পরিবেশিত হবে। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল সোয়া ৬টায় রমনার বটমূলে রাগালাপ ও সংগীতে শুরু হবে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন। ছায়ানটে দিনটিকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে মহড়া শুরু হয়েছে।
গত দুই বছরের চেয়ে এবছর শিল্পীদের সংখ্যা সীমিত রাখা হয়েছে। মঞ্চে প্রায় একক ও সম্মিলকসহ শতাধিক শিল্পী অংশ নিবেন। অনুষ্ঠান শুরু হবে ভোর সোয়া ৬ টায়। শেষ হবে প্রায় আড়াই ঘন্টা পরে। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হবে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার বর্ষবরণের মূল আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। সপ্তাহখানেক ধরেই চারুকলা বিভাগে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আনন্দময় পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নববর্ষ উদ্যাপনের জন্য ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলা একাডেমি, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, নজরুল একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এবারের নববর্ষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর আগে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ধানম-িতে রবীন্দ্র সরোবরে বৈশাখ উদযাপন করা হলেও এবারের আয়োজন হচ্ছে না।
এছাড়া সকল কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। সকল জাদুঘর ও প্রত্নস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিনা টিকেটে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। #