আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা
স্টাফ রিপোর্টার।। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতরাত ৮টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা আলোচনার পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসব সিদ্ধান্ত বিষয়ে ‘উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি পড়ে শোনান আইন মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এসময় পাশে ছিলেন তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াঁ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান প্রমুখ।
উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিটি নিম্নরূপ :
‘ঢাকা, ১০ মে, ২০২৫ : আজ শনিবার, ১০ মে ২০২৫ তারিখে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগ-এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।
এর পাশাপাশি, আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।’
এদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তিন দিন ধরে এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের টানা কর্মসূচি পালনের প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পরিষদের এ সিদ্ধান্ত এসেছে। সবশেষ ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এহেন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। হত্যা, নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও জননিরাপত্তা বিঘœসহ নানা অপরাধের দায়ে এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।