বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির লালবাগ ও ওয়ারী বিভাগ। শনিবার (৬ জানুয়ারি) তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, ট্রেনে নাশকতার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা যুবদল নেতা মনসুর আলম এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবী।
বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ ছাড়াও গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- যুবদল নেতা কাজী মনসুর আলম, মো. ইকবাল হোসেন স্বপন, মো. রাসেল, দেলোয়ার হাকিম বিপ্লব, মো. সালাউদ্দিন, মো. কবির ও মো. হাসান আহমেদ।
ডিবি জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যানবাহনে আগুন দেয়া, প্রার্থীদের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, ভোটকেন্দ্রে অথবা তার আশপাশে হাতবোমা নিক্ষেপ করে ভোটারদের আতঙ্কিত করা, প্রচারপত্র বিলি করার কাজসহ গতকাল (শুক্রবার) গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিতে আগুন দেয়ার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও জনবল দাতা মনসুর আলম এবং বিএনপির পক্ষে আশ্রয় ও অর্থদাতা নবী উল্লাহ নবীকে পৃথক অভিযান চালিয়ে ৮ জনসহ গ্রেপ্তার করেছে ডিবি লালবাগ ও ওয়ারী বিভাগ।
এর আগে দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, দু’দিন আগে অনলাইন বৈঠকে এ পরিকল্পনা হয়। এতে ছিলেন দক্ষিণ যুবদলের ৮টি টিম লিডার। পরামর্শ ও অর্থদাতাদের অন্যতম ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী। কাজী মনসুরের নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য মিলেছে।
ডিবি প্রধান বলেন, ট্রেনে আগুন লাগার আগে বিএনপির ১০/১১ জন ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর পরিকল্পনা করেন। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের পরিকল্পনা হিসেবে বিএনপির হাইপ্রোফাইল নেতারা ভিডিও কনফারেন্স করেন। কনফারেন্সে প্রথমে আসেন মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম। এরপর আসেন সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ গাফফার, ইকবাল হোসেন বাবলু, একজন দপ্তর সম্পাদক ও কাজী মনসুর।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে থমথমে হয়ে উঠেছে রাজধানী। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে দগ্ধ কয়েকজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, দগ্ধ আটজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের সবাই মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে, ট্রেনে নাশকতার পর রাতেই গোপীবাগের কাছাকাছি একটি বস্তি থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সঙ্গে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার তদন্তে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
অন্যদিকে, শুক্রবার রাজধানীতে ট্রেনের পাশাপাশি বাসেও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাতে রাজধানীর ডেমরায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। এছাড়াও একই দিন সন্ধ্যায় মগবাজারে নির্বাচন বিরোধী মশাল মিছিলে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের বিপরীত পাশের রাস্তায় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।