ঈশ্বরদীতে রোগীর সাথে অসদাচারণে বিক্ষুদ্ধ জনতার হাসপাতাল ঘেরাও, পুলিশ এসে উদ্ধার
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি ঃ
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় ডা. মো: শাহরিয়ার কে অবরুদ্ধ করেন ঈশ্বরদীর বিক্ষুদ্ধ জনতা। পরে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
শুক্রবার ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১০ ঘটিকার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের মারফত জানাযায়, গতকাল শুক্রবার রাত আনুমানিক আট ঘটিকার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন উপজেলার পৌর এলাকা ঈদগা রোডের মো. শওকত হোসেন শাকিলের স্ত্রী মোছা. নিশিতা আক্তার। সে সময় জরুরী বিভাগে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ডা. শাহরিয়ার।
রোগীর সাথে হাসপাতালে আসা তার ননদ মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, আমার ভাবির হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে যায় এবং সে হাতে পায়ে শক্তি না পাওয়ার কারনে আমরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে দ্বায়িত্বরত ডা. আমাদের কথা ভালো করে না শুনে সে আমাদের নানা কটুক্তি করতে থাকে । তখন কটুক্তির প্রতিবাদ করলে সে নানা বাজে ব্যবহার করতে থাকে আমাদের সাথে। তার কথার এক পর্যায়ে গাল দিয়ে বলেন, এখানে ডাক্তার আমি না আপনারা ? এখানে আমার কথা ছাড়া আমি কারো কথা শুনতে আসি নি, এখানে আমি যেটা বলব সেটাই হবে। আপনারা আল্লার ওলি হয়ে আসেন নি যে আপনাদের কথা শুনব। আমি আপনাদের কথা শুনতে বাধ্য নই !
তাছলিমা আরও বলেন, আমার মা রোগীর শারিরিক জটিলতার কথা বলে তাকে ভর্তি করার অনুরোধ করলে ডা. শাহরিয়ার আমার মাকে ধমক দিয়ে তুই তোকারি করতে থাকেন এবং রোগী নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।
ডাক্তার কর্তৃক খারাপ আচরনের সত্যতা স্বীকার করে তাছলিমার মা বলেন, রোগী চিকিৎসার জন্য এনে ডাক্তারের সাথে কথা বলা যায় না এমন জঘণ্য আচরনের ডাক্তার আমার জীবনেও আমি দেখিনি। সে সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন একজন শিক্ষিত মানুষের মুখের ভাষা এতটা জঘন্য হতে পারে সেটা এই ডাক্তারের সাথে কথা না বললে জানতাম না। ওর পরিবার ওকে ভালো ব্যবহার শেখায়নি।
জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ডাক্তার শাহরিয়ার বলেন, আমি কারো কথা শুনতে এখানে আসিনি ! আমি যা বলব এখানে সবাইকে সেটা শুনতে হবে। না হলে অন্যত্র যাবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে ডা. শাহরিয়ার আরও বলেন, আপনারা অনেকের কথা হজম করতে পারলেও আমি সেটা পারি না। আমার ধারণ ক্ষমতা অনেক কম তাই এমন আচরণ করে ফেলি।
অন্য ডাক্তারদের সাথে নয় কেবল আপনার সাথেই রোগী ও তার স্বজনদের কেন বার বার এমন হয় জানতে চাইলে সে প্রশ্নের কোন সদুত্তর ডা. শাহরিয়ার দিতে পারেননি। উল্টো তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তিনি কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলবেন না বলেও সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন।
রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. শাহরিয়ার কর্তৃক আবারো রোগী হয়রানির সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুদ্ধ জনতা ঐ রাতেই সদর হাসপাতালের মূল ফটকে এসে ভীড় জমায় এবং ডাক্তারকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। বিক্ষুদ্ধ জনতার রোশানল থেকে নিজেকে বাঁচাতে ডা. শাহরিয়ার ঈশ্বরদী থানায় অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতাকে শান্ত করেন এবং শাহরিয়ারকে মুক্ত করেন।
অভিযুক্ত ডা. মো: শাহরিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্য মূর্তমান আতঙ্ক বলে মন্তব্য করেন অনেকেই। তার সাথে রোগীর কোন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলেই তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। সে সবজান্তা মন্তব্য করে রোগীসহ তাদের স্বজনদের চুপচাপ বসে শুধু তার কর্ম দেখতে বলেন, না চাইলে তার সামনে থেকে দুর হয়ে যেতে বলেন। তার এমন আচরণে প্রতিবাদ করলেই বেরিয়ে আসে তার আসল চেহারা। রোগীদের সাথে তুই তুকারী, গালাগাল এমনকি গায়ে হাত তোলার ও একাধিক অভিযোগ রয়েছে ডাক্তার শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে।
এমতাবস্থায় ভুক্তভোগী পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঈশ্বরদীর সর্বস্তরের মানুষের একটাই দাবি অনতিবিলম্বে ডা. শাহরিয়ারকে এই হাসপাতাল থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবার মান অক্ষুন রাখবে এটিই প্রত্যাশা।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসমা খানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি ডা. শাহরিয়ারের পক্ষ অবলম্বন করে বলেন, একজন ডাক্তারের সাথে যদি রোগীর লোকজন ক্রমাগত খারাপ আচরণ করতে থাকেন তাহলে ডাক্তার কতক্ষণ ধর্য্য ধারন করবেন। তিনি এও বলেন ডাক্তার রোগীর লোকজনকে কোন বাজে মন্তব্য করেননি।
তার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডা. শাহরিয়ারের রেকর্ডেড বক্তব্য আছে জানালে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন আমি তোমার চেয়ে বড় কারো সাথে কথা বলবো, তোমার সাথে কথা বলবো না।
এবিষয়ে ঈশ্বরদী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর এম এ রউফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্হলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নিরসন করে।