ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবে গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
স্টাফ রিপোর্টার ।। গভীর শ্রদ্ধা ও নানা আয়োজনে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেছে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব। ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ স্মরণে দিনব্যাপী এসব আয়োজন করা হয়।
দিবসটি স্মরণে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা ও স্মারক সন্মাননা প্রদান হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা-৪ আসনের সংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি। বক্তব্যে তিনি বলেন, শত ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূল অবস্থাকে কাটিয়েও বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসে দেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বিক্রমের সামনে টিকতে না পেরে যখন আত্মসমর্পণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন তার অব্যবহিত পূর্বে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা প্রণয়ন করে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী স্বাধীন বাঙালি জাতিকে মেধা-মননহীন করে তুলতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান-শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ সমাজে সৃজনশীলতায় অগ্রণী মানুষদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাযজ্ঞে সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের দোসর এ দেশের রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামের ঘৃণিত, ধিকৃত কিছু কুলাঙ্গার। তাঁরা চেয়েছিল বাঙালি জাতিকে মেধাহীন পঙ্গু জাতিতে রুপান্তর করতে, যাতে স্বাধীনতা অর্জন করলেও এ জাতি যেন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।
নুরুজ্জামান বিশ্বাস আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যে জাতিকে তাঁরা মেধাহীন পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিল সে জাতি আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০৪১ সালে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রদূত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্ভর একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, পৌর মেয়র ইছাহক আলী মালিথা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পি.এম ইমরুল কায়েস।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ত.ম. শহীদুজ্জামান নাসিম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার, পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল খালেক, পূর্ব টেংরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দীন বিশ্বাস, পাকুড়িয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ঈশ্বরদী উপজেলা কমিটির যুগ্ন আহবায়ক সহকারী অধ্যাপক শহিদুল হক শাহিন ও জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক রশিদুল আলম বাবু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি উপজেলা শাখার সভাপতি ফজলুল হক। সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন।
আলোচনা শেষে মুক্তিযুদ্ধে ঈশ্বরদী অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক উদায় নাথ লাহিড়ী, পূর্ব টেংরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন বিশ্বাস, সরকারি সাঁড়া মাড়োয়ারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও ঈশ্বরদীতে মুক্তিযোদ্ধাকালীন সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইছাহক আলী (মরণোত্তর) ও ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বিশ্বাস (মরণোত্তর) সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগীতা বিজয়ী ‘ক’ বিভাগ জারিন তাসনিম, সাদিয়া তাসনিম, রাইয়ান আজাদ ও ‘খ’ বিভাগ মুনতাহা আমরিন, জয়িতা সূচি ও মেহেদি হাসানের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
এদিকে সকালের কর্মসূচির মধ্যে ছিল প্রেসক্লাব চত্বরে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাচ ধারণ, সাড়ে ৮টায় প্রেসক্লাব সংলগ্ন শহীদ বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন। সন্ধ্যায় স্মৃতিস্তম্ভে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শহীদদের সম্মান জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা,ঈশ্বরদী উপজেলা খেলাঘর, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।