——মুনমুন আক্তার–।।—- আমাদের সব কিছুই আধুনিক হয়েছে,উন্নতও হয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা সব কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে শুধু পরিবর্তন হয়নি আমাদের চিন্তাধারার। বর্তমানে সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে আমাদের দেশও। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে সকল ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন । তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে শুরু করে বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ,আনসার, বিচার বিভাগ, সিভিল প্রশাসনসহ সরকারি বেসরকারি সকল সেক্টরে নারীদের সরম উপস্থিতি তার উৎকৃষ্ট উদাহরন। সকল ক্ষেত্রেই পুরুষের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে নারীরাও। বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে, “বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”
আদীকাল থেকেই পুরুষ জাতির অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নারী,আজও ঠিক একই ভাবে সকল ক্ষেত্রেই সমানতালে পুরুষের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে নারী। আজ মহাকাশ ভ্রমণ থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলদেশে ডুবুরি, প্রকৌশলী, এভারেস্ট বিজয়, চিত্র শিল্পী, খেলোয়ার , ড্রাইভার, শিক্ষক, পুলিশ, আর্মি, বিডিয়ার,ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশায় তারা যুক্ত। সকল ক্ষেত্রেই নারীর অবদান অপরীসীম ।তবে কেন এত সংশয়, কেন এত দ্বিধা,কেন এত ভয়,যদি একজন নারী সাংবাদিক হয়?
একজন নারী যদি নিজের সব দায়-দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি নিজের জন্য, এই দেশের জন্য,একজন নাগরিক হয়ে প্রশাসনের পাশে থেকে দেশের হয়ে কাজ করতে চায় তবে সামাজিকভাবে এত বাঁধা বিপত্তি আসে কেন? তার চলার পথে জীবন-জীবিকার প্রশ্ন বাঁধা সৃষ্টি না করে, তাকে বিভ্রান্ত না করে বরং উৎসাহ দেওয়া উচিত। বর্তমান সময়ে নারীদের অগ্রাধিকার অনেক বেশি সকল ক্ষেত্রেই। একজন নারী যখন নিজের সংসার সামলানোর পর একটা দেশ পরিচালনা করতে পারে তখন সেই নারী সাংবাদিকতাও করতে পারে।এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রাজধানীসহ নগর-মহানগর গুলোতে দেখা যায় অনেক নারী সাংবাদিক দাপটের সাথে তাদের যোগ্যতার প্রমান রাখছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মফস্বল শহরে বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই ধরনের বাঁধা সৃষ্টি করা হয় নারীর সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে।সামাজিকভাবে বাঁধা যেমন আছে তার চেয়েও বেশি বাঁধা মফস্বলে যারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন অভিজ্ঞ অনভিজ্ঞ সকলেই নারী সাংবাদিকদের সবসময় নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করে যদিও শুধু যে নারীর ক্ষেত্রে মফস্বলে এই অবস্থা তা নয়।এখানে নবাগত সকলকেই এই পেশায় আসার ক্ষেত্রে আবার পুরনো অনেক গুনি পেশাদার সাংবাদিকদেরও দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী তথাকথিত সাংবাদিকরা তাদের কাজকর্মে বাঁধা সৃষ্টি করে থাকে। এর পেছনে হয়তো বা তাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ায় কারণ বলে মনে হয়।
আমাদের সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসলেও চিন্তা ধারাই সম্পূর্ণ পরিবর্তন এখনো আসেনি। সকল ক্ষেত্রে চিন্তাধারা এখনো ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে। এই সমাজে অনেক লোকই এখনও ভাবে নারী মানেই কেবল পর্দার আড়ালে থাকা, নারী মানেই সংসার সামলানো, বাচ্চা লালন পালন করা, বয়স্কদের সেবা করা, এবং সংসারে অন্যান্য কাজের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা।
কিন্তু না, সময়ের সাথে আমাদেরকেও পরিবর্তন হতে হবে। সেই সাথে সকল ক্ষেত্রে চিন্তাধারা, মনমানসিকতারও পরিবর্তন আনতে হবে।
দেশের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই নারীরা রয়েছে অগ্রভাগে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, এমপিসহ অসংখ্য জনপ্রতিনিধি রয়েছে এই নারী। নারীরা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয় দেশের বাইরেও তারা দাপটের সাথে কাজ করে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছে। কোন ক্ষেত্রেই নারীদের চলাচলে আজকে বাঁধা নেই। বাঁধা নেই অন্য কোন পেশার সাথে সম্পৃক্ত হতে কেবল নারী সাংবাদিকতা মেনে নেয়াটাই যেন সকলে গাত্রদাহে পরিণত হয়েছে। এই মানসিকতার পরিবর্তন অত্যাবশ্যক।