ঢাকা অফিস।।
দুর্যোগের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মহামারির কারণে রেমিটেন্স নিয়ে অনেকের শঙ্কা ছিলো; তবে তা অব্যাহত আছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে কাজ করে বলেও মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। তবে দুর্যোগ মোকাবেলা করেও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।
গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সভার বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, করোনার মধ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র আওয়ামী লীগই মাঠে ছিলো। দলের নেতাকর্মীরা মানুষের কাছে গিয়ে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু অন্য দল ও এনজিওগুলো এসময় মাঠে ছিলো না। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে অন্যদের দেখেছি কেবল লিফ সার্ভিস দিতে, মুখে মুখে কথা বলেছে। কিন্তু প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে গিয়ে সাহায্য করার বিষয়টিতে অন্য দলগুলো বা এনজিওসহ কোনও সংস্থার উপস্থিতি সেইভাবে দেখা যায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সভায় শেখ হাসিনা বলেন, আমরা করোনাভাইরাসের কারণে এতদিন মিটিং করতে পারিনি। এখন আস্তে আস্তে কিছু মিটিং শুরু করছি। সেই জন্য এ সভাটার আয়োজন করছি। দুঃখের বিষয় হলো করোনাভাইরাসে আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি। তিনি বলেন, করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকে ধারণা করছিলেন আমাদের রেমিট্যান্স কমে যাবে। রেমিট্যান্স কিন্তু কমেনি। আমরা দুই শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি, যার কারণে বেড়েছে। অনেকেই ভাবতেই পারনি রেমিট্যান্স এত বাড়বে। আমাদের রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৪০ মার্কিন ডলার। রিজার্ভও ভালো অবস্থানে। অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি ভালো অবস্থায় আমরা আছি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই ইকোনমিক পলিসি আছে। সেটাকে মাথায় রেখেই কিন্তু আমরা কাজ করে যাই। এখন আমরা সরকারে আছি এজন্য আমাদের দায়িত্ব হলো শুধু বর্তমান নয়, আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের জন্য দেশটা কীভাবে এগিয়ে যাবে, দেশ কীভাবে চলবে, এখন থেকে সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রাখবো। নির্দেশনা দিয়ে দেবো। এখন আমরা যেটা করছি সময়ের বিবর্তনে হয়তো তা সংশোধন করতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে। পরিশোধন করতে হবে। এটা করতেই হবে। এটা নিয়ম।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, পরিবর্তন করতে হবে তা আমরা জানি। কিন্তু তারপরও একটা ফ্রেমওয়ার্ক, একটা ধারণাপত্র অথবা একটা দিকনির্দেশনা; সেটা যদি সামনে থাকে তাহলে যেকোনও কাজ খুব সহজে হয়। যারাই আসুক ভবিষ্যতে তারাই করতে পারবে। কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আমার তো ৭৪ বছর বয়স। কাজেই সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর কতদিন! কাজেই তারপরে যারা আসবে তারা যেন দিকহারা না হয়ে যায়। তাদের যেন একটা দিকনির্দেশনা থাকে, একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। সেজন্য আমরা প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করলাম। এরপর দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিলাম। ২০৪১ সাল পর্যন্ত কী হবে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ সালে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছিলাম ২০১০ থেকে ২০২০। সেখানে এখন আমরা ২০২১ থেকে ২০৪১ সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছি। বাংলাদেশ হচ্ছে একটা ডেল্টা। আমাদের বদ্বীপ। এই বদ্বীপের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নদীগুলোর ভাঙন হচ্ছে, নদীগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলোকে বাঁচানোর জন্য এটা দরকার। আমরা ডেল্টা প্ল্যান যেটা করেছি। ডেল্টা প্ল্যানের লক্ষ্য, আমাদের যতগুলি বড় নদী এবং যা আছে, আমরা নদী ড্রেজিং করে নদীর নাব্য বজায় রেখে এই বদ্বীপটা রক্ষা করা এবং সুরক্ষিত করা। আমাদের দেশের মানুষকে কীভাবে সুন্দরভাবে একটা জীবন দেওয়া যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নটা ত্বরান্বিত করা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি, বাস্তবায়ন করছি। জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়েছে-এসডিজি-২০৩০। সাসটেইনবেল ডেভেলপমেন্ট গোল। অর্থাৎ একটা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সেখানে যে ধারাগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করেছিলাম। এসডিজি বাস্তবায়নেও আমাদের সাফল্য আসবে, এজন্য আমরা ঠিক আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ধারাগুলো সেগুলো নিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।