স্টাফ রিপোর্টার।।
গাইনি বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতিতে ঝাড়ুদার ও আয়া কর্তৃক নরমাল ডেলিভারি ( সন্তান প্রসব) করাতে গিয়ে আবারও নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসূতির জীবন সংকটে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার(৮জুন)ভোররাতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে এসব ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে বিধীমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মালেকুল আফতাব ভূঁইয়া।
উত্তেজনারোধে জমজম হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। আর এই ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন মৃত নবজাতকের বাবা মোঃ সাইদুর রহমান। এর আগে চলতি বছরের ১১ মার্চ ডাক্তার নাফিসা কবিরের দায়িত্বে অবহেলায় উপজেলার সলিমপুরের মিরকামারি গ্রামের ইমারত আলীর মেয়ে প্রসুতি ইসরাত জাহান সিন্তার নবজাতকের মৃত্যু হয়। প্রসুতি সিন্তার অবস্থাও গুরুতর ছিল। তাকেও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
ভুক্তভোগি পরিবার ও থানায় দায়ের করা এজাহার সুত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীর পাশ্ববর্তি লালপুরের মাজদিয়া এলাকার সাইদুর রহমানের স্ত্রী জিমু খাতুনের সন্তান প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাফিসা কবিরের নিকট নিয়ে আসেন। বাচ্চার পজিশন ঠিক নেই তাই নরমালে সম্ভব না হলে অপারেশনের মাধ্যমে ডেলিভারি করাতে হবে বলে জানান ডাক্তার নাফিসা। পরিবার থেকে অপারেশন করার কথা বলা হলে তিন ঘন্টা পর অপারেশন করা হবে জানিয়ে বাসায় চলে যান ডাক্তার নাফিসা। এর দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর জমজম হাসপাতালের আয়া ছালমা খাতুন, ঝাড়ু–দার পারুল, সাথি ও ওটিবয় মোঃ রাসেল প্রসুতি জিমুকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এরপর তারা নরমালে বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে প্রসুতির গোপনাঙ্গ ছিড়েছুটে রক্তাক্ত করে ওটি থেকে নবজাতকের মরদেহ বের করে আনেন। তারাই প্রসুতিকে গোপনাঙ্গের দুইপাশে ১৬ টি সেলাই দেন। কিন্তু রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকে। এতে জীবন সংকটে পড়েছেন প্রসূতি। অপচিকিৎসার বিষয়ে আপত্তি তোলেন প্রসূতির স্বজনরা। খবর পেয়ে ডাক্তার নাফিসা কবির ও তার স্বামী ডাক্তার রিয়াদুল কবির জান্নাত হাসপাতালে এসে প্রসুতির স্বামী সাইদুরের সঙ্গে অশালিন আচরণ করেন ও এক কক্ষে বন্ধি করে রাখেন। অবস্থা বেগতিক দেখে সাইদুর জরুরী সেবা নম্বার ৯৯৯ কল করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে উত্তেজিত হয়ে পড়েন প্রসুতির স্বজনরা। থানার পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে সাইদুরকে উদ্ধার করেন।
প্রসুতির স্বামী ও নবজাতকের বাবা সাইদুর রহমান বলেন, অপারেশন ছাড়া নরমালে ডেলিভারি করাতে গেলে ঝুঁকি আছে জানালেন ডাক্তার নাফিসা। তিন ঘন্টাপর অপারেশন করা হবে জানানোর পর ডাক্তার নাফিসার অনুপস্থিতিতে ঝাড়ুদার, আয়ারা নার্স সেজে টেনে হেঁচড়ে ডেলিভারি করাতে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমার স্ত্রীর গোপনাঙ্গ ছিঁড়েছিটে ফেলে ১৬ টি সেলাই দিয়েছে। রক্তক্ষরণ অব্যহত রয়েছে। অবস্থা সংকটময়। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই বিষয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাবনা সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মালেকুল আফতাব ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। প্রসূতির স্বজন ও হাসপাতালের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন গাইনি বিশেষজ্ঞকে প্রদান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। জমজম স্পেশালাইজ হাসপাতালসহ ঈশ্বরদীর ক্লিনিকগুলো অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ভর্তি। বার বার নবজাতক, প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সবগুলো ঘটনায় তদন্ত করা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন পাবনার ডাক্তার মোহাম্মাদ খায়রুল কবির বলেন, এই ব্যাপারে নিহত নবজাতকের বাবা সাইদুর রহমান জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম বলেন, জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসূতির অবস্থা সংকটময় হওয়ার অভিযোগে এজাহার দায়ের করেছেন প্রসুতির স্বামী সাইদুর রহমান। জমজম হাসপাতাল থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার নাফিসা কবির বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে নার্সরা নরমালে ডেলিভারি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নবজাতকের গলায় নাড়ি জড়িয়ে ফাঁস লেগে মারা গেছে। এটা হত্যা নয়, একটি দূর্ঘটনামাত্র। তার কাছে আয়া সালমার কোন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া তেমন কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি ###