ঈশ্বরদীতে বিএনপির কর্মীকে কুপিয়ে জখম ॥ আওয়ামীলীগের ৩৫ ঘর বাড়ি আগুনে ভশ্মিভূত
ঈশ্বরদী (পাবনা) উপজেলা সংবাদদাতা।।
নির্বাচনী বিরোধ ও খাস জমি দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের তরিকুল ইসলাম শেখ (২৬) নামের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগসহ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী। এই ঘটনার জের ধরে তরিকুলের স্বজনরাসহ দলীয় লোকজন হামলাকারী আওয়ামীলীগের ১১ নেতাকর্মীদের অন্তত ৩৫ টি ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ভস্মিভুত করে দিয়েছে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় থানার ওসিসহ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু সশস্ত্র লোকজনের বাধার মুখে নিরাপত্তাজনিত কারণে আগুন না নিভিয়েই ওসিসহ ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্হল ত্যাগ করে । পরে পাবনা-১২, সিপিসি-২ পাবনা ক্যাম্পের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণসহ পরিস্থিতি শান্ত করেন।
গত বুধবার দুপুর থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত পাবনার ঈশ্বরদীর বহুল আলোচিত ৬খুনের এলাকা (সিক্স মার্ডার) লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের কামালপুর, চরকুরুলিয়া ও সাহাপুরের চরগড়গড়ি আলহাজ মোড় এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
আহত তরিকুল ইসলাম(২৬) ওই এলাকার রিকাত আলী শেখের ছেলে।
আওয়ামীলীগের যাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে ভুস্মিভুত করা হয়েছে তারা হলেন, লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের নসিরের ঘাট এলাকার মৃত নুর আলী প্রামানিকের চার ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা আসাদুল ইসলাম মেম্বার, আকুব্বার প্রাং, মোমিন প্রাং, আলামিন প্রাং, মৃত আলিমুদ্দি মীরের ছেলে শফি ঘোষ, মৃত লাল চাঁদের ছেলে চাঁদ আলী, জহুরুলের ছেলে আশিক, মৃত মুজাম সরদারের দুই ছেলে আজিম সরদার, নাজিম সরদার।
ঈশ্বরদী শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম এলাকা লক্ষ্মীকুন্ডার চরমাদিরার চর, ডিগ্রীর চর ও তালবাড়ি চরের কয়েক হাজার একর সরকারী খাস জমির দখল নিয়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ দাঙ্গা চলে আসছে।
সরেজমিনে গত বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার সময় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকদলের কর্মী তরিকুল ইসলাম ইসলাম শেখ তালবাড়ির চরে যান। এই সময় আওয়ামীলীগের পক্ষের লোকজন তার পায়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার উপর হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করে আহত তরিকুল ইসলাম। এরপরই তরিকুলের স্বজনরা ও দলীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামীলীগের ওই নেতাকর্মীদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেন।
আহত তরিকুল ইসলামের বরাত দিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা সাইদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, চরে জমি দেখতে গেলে আওয়ামীলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মেম্বারের হুকুমে তার পক্ষের লোকজন আসাদুল মেম্বার, আলামিন প্রাং, আকুব্বার, শফি, আশিক, নাজিমসহ অন্যান্যরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তরিকুলের পায়ের রগ ও হাটু কেটে ফেলে। বর্তমানে তরিকুল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানান সাইদুল ইসলাম।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আওয়ামীলীগের এই গ্রুপটি আওয়ামীলীগের সময়ে এলাকা থেকে অনেক মানুষকে তাড়িয়েছে। বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর, লুটপাট করেছে। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে ভস্মিভুত করেছিল। ৫ আগষ্টে শেখ হাসিনার পতনের পর এই গ্রুপের কিছু লোকজন আত্মগোপনে থেকে মাঝেমধ্যেই গোপনে বিএনপির লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করছে।
আওয়ামীলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মেম্মার ও ওমর ফারুখ বিএনপি নেতা সাইদুলসহ অন্যান্যদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৫ আগষ্টের পর থেকে আমরা নিজবাড়িতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি। নিজেদের নামীয় ও সরকার থেকে লীজ নেওয়া চরের জমি ছেড়ে এসেছি। এই জমি এখন বিএনপি নেতা সাইদুল ইসলাম প্রামানিক ও কুষ্টিয়ার হরিশপুরের জৈনক মুকুল গ্রুপ দখল করে নিয়েছে। এই নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের জের ধরে মুকুল গ্রুপই স্বেচ্ছাসেবক দলের তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে জখম করেছে। আর সেই দায় আমাদের উপর দিয়ে আমাদের অন্তত ৩৫ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। এখন শীতের দিনে আমরা পরিবার পরিজনদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে লক্ষ্মীকুন্ডার দূর্গম ওই এলাকায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে ফিরে আসা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা ও র্যাব সদস্যরা এলাকা টহলে রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে এসংবাদ লেখা পর্যন্ত এই ব্যাপারে থানায় লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ###