নিখোঁজের দুদিন পর যুবকের মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রতিনিধি:
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর শরিফুল ইসলাম (৪০) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়। সোমবার(১৮ আগষ্ট) ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। পরে নিহত শরিফুল ইসলামের পরিবারকে খবর দিয়ে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে নিখোঁজ হওয়া ও তার দুদিন পরই মরদেহ উদ্ধারের এ ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করছেন নিহত শরিফুল ইসলামের পরিবার।
পরিবারের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাটার পেছনের গল্প খুঁজতে সরেজমিনে অনুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সুত্রমতে জানা গেছে, গত শনিবার (১৬ আগষ্ট) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের(৪,৫ ও ৬) মহিলা ইউপি সদস্যর মোছাঃ রোমেসা বেগমের ছেলে মোঃ আরিফ ও স্থানীয় মোঃ জসিম বিহারী নামে আরেক যুবকের সঙ্গে পারিবারিক কলহের জের ধরে বাকবিতন্ডা হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আরিফ ও জসিম বিহারী নামে ওই দুই যুবকসহ একটি গ্রুপ জোরপূর্বক শরিফুল ইসলামকে নিজ বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ইউপি সদস্য রোমেসা বেগমের বাড়ির পেছনে বেদম পিটিয়ে তাকে রক্তাক্ত করে। পরে শরিফুল ইসলাম প্রাণনাশের ভয়ে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে নিজ বাড়িতে আসে। পিটিয়ে রক্তাক্ত করেও ক্ষান্ত হননি আরিফ ও জসিম গ্রুপ। তারা আবারও শরিফুলের বাড়িতে এসে তার জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে শরিফুলকে বাইরে আসতে বলেন। বাইরে আসার পর থেকে রাতে আর বাড়িতে ফিরেননি শরিফুল। পরদিন থেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান পায়নি শরিফুলের পরিবার। আর এ নিখোঁজের দুদিন পর আজ শরিফুল ইসলামের মরদেহ পাওয়া গেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের বিভিন্ন সময় ধরে ইউপি সদস্য মোছাঃ রোমেসা বেগমের পরিবারের সঙ্গে নিহত শরিফুল ইসলামের পরিবারের জমিজমা সংক্রান্তসহ নানা বিষয়ে বিরোধ চলে আসছিল। সর্বশেষ শনিবার তেমনই একটি বিরোধের জের ধরে তাকে বেদম পিটিয়েছে ওই ইউপি সদস্যের ছেলের একটি গ্রুপ। এ ঘটনার পর থেকেই শরিফুল ইসলাম নিখোঁজ হয় এবং দুদিন পর আজকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে নিহত শরিফুল ইসলামের পরিবার সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন আরিফ ও জসিম বিহারী গং শরিফুলকে পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে।
তবে পূর্বের বিরোধ ও শনিবার(১৬ আগষ্ট) শরিফুলকে মারধর করার ঘটনার সত্যতা জানতে মহিলা ইউপি সদস্য মোছাঃ রোমেশা বেগমের বাড়িতে গেলে বাড়িটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে মুঠোফোনে এ বিষয়টি জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শরিফুলের পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ও শরিফুলকে মারধরের ঘটনাটি অস্বিকার করে বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শরিফুল ইসলামের চাচাতো ভাই জসিম বিহারী তাকে মারধর করেন। এ ঘটনার সঙ্গে আমার ছেলের কোন সম্পৃক্তা ছিলনা।
পরে অভিযুক্ত জসিম বিহারীর বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী মোছা: মনি খাতুন বলেন, বিগত এক মাস ধরে আমার স্বামী বাড়িতে নেই। সে অন্য একটি মামলার কারনে পলাতক রয়েছে। এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে জসিম বিহারীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মৃতের স্ত্রী পারভীন আক্তার ও ভাগিনা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, নিহত শরিফুলের চাচা আউয়ালের সাথে জমির সীমানার একটি গাছ নিয়ে বিতন্ডায় ৩ দিনের আল্টিমেটাম দেন চাচা আউয়াল। জসিম ও আরিফের সাথে জোট বেধে তারাই শরিফুলকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে বলেও তারা দাবি করেন। তবে এ ঘটনার সাথে নিজের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন হাজী আউয়াল হোসেন।
চুয়াডাঙ্গা রেলওলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জগদীস বলেন, শরিফুলের মৃতদেহটি পেয়ে পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আব্দুন নুর বলেন, শরিফুল হত্যার বিষয়ে ওই থানাতে ইউডি মামলা হয়েছে।