ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে এস এম রাজা।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বিশ্ব সমাজে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অর্থাৎ,আমরা এখন পরমাণু শক্তির একটা অংশ হিসেবে বিশ্বে স্থান করে নিতে পারলাম। আজ ১০ অক্টোবর’২১সকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট ১-এর রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ’কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে আরো বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প পরমাণু শক্তি শান্তির জন্য ব্যবহৃত হবে এবং এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের গ্রামপর্যায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে। আমরা দাবি করতে পারব যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ৯৯ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। তিনি বলেন, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা যত বাড়বে তত বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। তাই আমরা দেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল যত বাড়বে সেখানে ততবেশি শিল্পায়ন হবে, বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে ততই বেশি। সেটাকে মাথায় রেখেই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সে মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ’অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন রোসাটমের ডিরেক্টর জেনারেল মিস্টার আলেক্সা লিকাচিভ। স্বাগত বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কারন ছিল যে, দেশের মানুষ ক্ষুধার্ত দারিদ্র নিপীড়িত নির্যাতিত ছিল। তাদের একবেলা পেটে খাবার জুটত না। সেইসব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে একটা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় ছিল তার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি ২৪ বছর সংগ্রাম করেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করি। স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তিনি গড়ে তোলেন। কারণ এই ভুখন্ডের মানুষ সব সময় ছিল সুবিধাবঞ্চিত। এ বঞ্চনার ইতিহাস পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ ১৯৬১ সালে যখন সিদ্ধান্ত হলো যে এখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ হবে তখন পাকিস্তান সরকার শুধু জমি দিয়েছিল। এরপর প্রকল্প নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা। এর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল কিন্তু তা পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করে। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে জাতির পিতা যে নির্বাচনী জনসভা করেছিলেন সেই সভাতেও তিনি পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন কিন্তু পাকিস্তানিরা ৬১ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কিছুই করেনি । এটাই ছিল বাস্তবতা। তারা কেবল ধোঁকাবাজি করেছে। অর্থ উপার্জন করেছে বাঙালিরা পূর্ববঙ্গে আর সেই অর্থ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। যা স্বাধীনতার পর ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য জাতির পিতা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়া অন্যদিকে পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়ন ছিল কঠিন একটি কাজ কারণ এই প্রকল্প অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প। তার পরেও তিনি হাল ছাড়েননি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করার কারণেই এ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ থেমে যায় । আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পরে এ প্রকল্প নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ এবং সাধ্যমত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ২১ বছর পর সরকারে এসে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেই । কাজ এগোতে থাকে কিন্তু দুর্ভাগ্য পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত সরকার ক্ষমতায় এসে এই প্রকল্পের ব্যাপারে কোনো ভূমিকা গ্রহণ করেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর আমরা আবার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের তড়িৎ ব্যবস্থা করি এবং সেই মোতাবেক কাজ চলতে থাকে । তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুন মেনে রাশিয়ার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু করি। এটা এখন বাস্তব রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্প সম্পর্কে নানা রূপ ভীতি প্রদর্শনকারী মিথ্যাচার করা হয় যা বাস্তবে কোনো মূল্য নেই। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হবে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। তিনি বিএনপি জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেখে গিয়েছিলাম, বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তা ধ্বংস করে দিয়েছিল। আমরা পুনরায় ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। যার সুফল দেশের মানুষ ভোগ করছে।
প্রেরকঃ এস এম রাজা, ঈশ্বরদী, পাবনা।