সংগ্রহঃ
গত ০৮/ ৯/২০২০ তারিখ বিকাল আনুমানিক ৪ টায় ঈশ্বরদী থানায় জরুরী ডিউটিতে নিয়োজিত এস আই ফিরোজ হোসেন ফোনে জানান যে একটি ৯/১০ বছরের ছেলে দাশুরিয়া এলাকায় পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছেলেটিকে নিজ হেফাজতে নিয়ে অফিসে আনতে বলি। অফিসে আনার পর জিজ্ঞাসায় জানা যায় সে তার মায়ের সাথে বাসে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে তাদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঈশ্বরদীর রুপপুর মোড়ে বাস যাত্রাবিরতি দিলে সবাই নেমে পড়ে। যাত্রাবিরতি শেষে সবাই গাড়িতে উঠলেও তার মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত অসাবধানতা বশত তাকে ছাড়াই গাড়ি ছেড়ে দেয়। এরপর সে সেখানে কিছুসময় অপেক্ষা করে একটি সিএনজিতে উঠে দাশুরিয়া মোড়ে এসে হতাশ হয়ে ঘুরতে থাকে এবং পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। ছেলেটির নাম সিয়াম। ৪ মাস বয়সে তার পিতাকে হারিয়েছে। সে তার মায়ের নাম ও বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে বলতে পারলেও কোন ফোন নাম্বার বা বিস্তারিত কিছুই বলতে পারছিলনা। তাকে ক্ষুধার্ত দেখালেও সে কোন কিছুই খেতে রাজি হচ্ছিলনা যেন রাজ্যের সকল চিন্তা তার মাথায় এসে ভর করেছে। তাকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার চিন্তা যেন আমাদেরকেও একইভাবে গ্রাস করছিল। অবশেষে সে দেশের উত্তর পুর্বাঞ্চলের একটি জেলার নাম বলে সেই জেলার এডিসি তার নিকট আত্নীয় বলে জানায়। সেই জেলার ওয়েবসাইট খুঁজে ডিসি অফিসে সেই বর্ননার কোন এডিসির তথ্য পাওয়া যায়নি। কিছুটা হতাশ হলেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সেই জেলার ডিসি অফিসের একজন অফিসারকে ফোন দিলে তিনি সেখানে এমন কোন কর্মকর্তা নেই বলে জানান। তবে অন্য অফিসে কাছাকাছি বর্ণনার একজন অফিসার আছেন বলে জানিয়ে তাহার ফোন নম্বর দেন। তাকে ফোন দিলে তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম বিসিএস এর একজন কর্মকর্তা বলে জানান এবং ছেলেটি তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলে তাকে উদ্ধারের জন্য ধন্যবাদ জানান। মনে হলো যেন হাফ ছেড়ে বাঁচা গেল। ঘটনা শুনে তিনি ছেলেটির মাকে জানালে তার মায়ের ফোন থেকে কিছুক্ষণ পর কল আসে। তিনি গভীর স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন রুপপুর মোড় থেকে বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই সিয়াম বাসে না থাকার বিষয়টি আবিস্কার করে তিনি বাস থেকে নেমে পুনরায় রুপপুর মোড়ে এসে সবদিক খোঁজাখুঁজি করে নিরুপায় হয়ে পুলিশকে না জানিয়েই নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পুনরায় রওনা দেন। তার সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তিনি ফরিদপুরে পৌঁছে গেছেন। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। তাই তিনি তৎক্ষনাত ফিরে ঈশ্বরদীতে আসতে চাইলেও তার পক্ষে সেই রাতে আসা সম্ভব হয়নি। এদিকে সিয়াম মহা দুশ্চিন্তায় থাকায় কোন কিছই মুখে নিচ্ছিল না। কিন্তু তাকে খাওয়ানোর মতো কঠিন কাজটিসহ রাতে গভীর আদর স্নেহে ঘুমিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নেয় এস আই ফিরোজ হোসেন ও থানার শিশু হেল্পডেস্কের নারী পুলিশ সদস্যরা। পরদিন দুপুর ১ টায় সিয়ামের মা এসে হাজির হন এবং তার ছেলেকে নিয়ে মহাখুশিতে মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কে জানে সঠিক সময়ে পুলিশের হাতে না পড়লে অবুঝ ছেলেটি কি বিপদে পড়তে পারত?