ঢাকা অফিস।।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে রেলপথের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। এ দূরত্বে প্রথম শ্রেণির (সিট) বর্তমান ভাড়া ৪৬০ টাকা। এ হিসাবে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আসে ১ টাকা ৩৩ পয়সা। একই মানের আসনে প্রতিবেশী ভারতে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আদায় করা হয় ৪৬ পয়সা (বাংলাদেশী টাকায়)। পাকিস্তানে আদায় হয় কিলোমিটারপ্রতি ৫৬ পয়সা। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলংকায় একই মানের আসনে কিলোমিটারপ্রতি ৭৭ পয়সা। ঢাকা-চট্টগ্রামে এসি (সিট) আসনের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ২৮ পয়সা। একই মানের আসনে ভারত ও পাকিস্তানে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের খরচ করতে হয় যথাক্রমে ২ টাকা ৩ পয়সা ও ২ টাকা ৪ পয়সা।
২০১৬ সালে নির্ধারণ করা হার অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা। সংস্থাটির বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়ার হার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নন-এসি (প্রথম শ্রেণি/সিট) আসনে কিলোমিটার ১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গন্তব্যভেদে এসি (সিট) আসনে আদায় হচ্ছে ২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে আড়াই টাকা।
চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে দূরপাল্লার ট্রেনগুলোতে কিলোমিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৪ পয়সা হারে ভাড়া বাড়ায় পার্শ্ববর্তি দেশ ভারত। দেশটিতে বর্তমানে নন-এসি আসনে কিলোমিটারপ্রতি ৪৬ পয়সা (বাংলাদেশী টাকার হিসাবে) ও এসি আসনে ২ টাকা ৩ পয়সা হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে ট্রেনের ভাড়া বাড়ায় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। নন-এসিতে কিলোমিটারপ্রতি ৫৬ পয়সা ও এসি আসনে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৪ পয়সা হারে ভাড়া আদায় করছে দেশটি। অন্যদিকে শ্রীলংকায় নন-এসি আসনে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আদায় হচ্ছে ৭৯ পয়সা। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান ভাড়ার হার অনুযায়ী পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি। এমন অবস্থায় আরেক দফা ভাড়া বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। স¤প্রতি ২৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্যারিফ কমিটি। সুপারিশ কার্যকর হলে ট্রেনের এসি বার্থ আসনের ভাড়া সমদূরত্বের গন্তব্যে বিমান ভাড়ার কাছাকাছি চলে আসবে। নন-এসি আসনের ভাড়া চলে আসবে নন-এসি বাস ভাড়ার কাছাকাছি। যদিও রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, এখনই ভাড়া বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে ভাড়া বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। ওই সময় ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ ও প্রতিযোগী যানবাহনের ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য করা অতীতে ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসব যুক্তিই দেখিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা এসব যুক্তিকে ঠুনকো হিসেবে অভিহিত করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে নয়, রেলওয়ের পরিচালন ব্যয়ের সিংহভাগ পণ্য পরিবহন ও বিভিন্ন অবকাঠামোর মাধ্যমে সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, রেলওয়ে ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও সেটি এখনই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, রেলওয়ের ভাড়া বাড়ানোর জন্য অনেক আগে একটা কমিটি হয়েছিল। এ কমিটি স¤প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে এখনই ভাড়া বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা রেলওয়ের নেই। মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার রেলের যাত্রীসেবার মান বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।