পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা কর্তৃক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন।।
জড়িত ০৩ আসামী গ্রেফতার ও ০৩ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান।
ডেস্ক রিপোর্ট।।
রাঙ্গামাটি জেলার চন্দ্রঘোনা থানার পশ্চিম কোদালা গ্রামের কৃষক দিদার আলম (২৮) এর স্ত্রী আসামী কহিনুর আক্তার (২৭) এর সাথে দিদার আলমের বন্ধু আসামী আব্দুল খালেক (৩০) এর পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভিকটিম দিদার আলম একদিন কহিনুর ও খালেককে আপত্তিকর অবস্থায় হাতেনাতে ধরে উভয়কে শাঁসিয়ে দেয়। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় কহিনুর তার পরকিয়া প্রেমিক খালেক সহ দিদার আলমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবে মর্মে একাধিকবার হুমকি দেয়। গত ৩১/০৫/২০২৫ ইং তারিখ সকাল থেকে ভিকটিম দিদার আলমের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় দিদার আলমের পিতা জামির হোসেন (৬০) প্রথমে চন্দ্রঘোনা থানায় জিডি নং-৫০, তাং-০২/০৬/২০২৫ইং দায়ের করেন। পরবর্তীতে তিনি বাদী হয়ে আসামী কহিনুর আক্তার (২৭) ও আব্দুল খালেক (৩০) সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অপহরন মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলাটি এজাহার হিসাবে গন্য করার জন্য অফিসার ইনচার্জ, চন্দ্রঘোনা থানাকে আদেশ প্রদান করলে এই সংক্রান্তে চন্দ্রঘোনা থানার মামলা নং- ০১, তারিখ-২৭/০৭/২০২৫ইং, ধারা-৩৬৪/৫০৬(২)/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। মামলাটি থানা পুলিশ কর্তৃক তদন্তাধীন অবস্থায় বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত তদন্তভার পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলায় হস্তান্তরের আদেশ দেন।
তৎপ্রেক্ষিতে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) জনাব মোঃ রুহুল আমিনকে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন মামলার তদন্তভার গ্রহন করে পুলিশ সুপার, পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলা জনাব মোহাম্মদ রুহুল কবীর খানের সার্বিক তত্বাবধানে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এজাহারনামীয় আসামীদের অবস্থান সনাক্ত করে গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর থানা এলাকা হতে গত ০৪/১০/২০২৫ ইং তারিখ এজাহারনামীয় আসামী ১। আব্দুল খালেক (৩০) ও ২। কহিনুর আক্তার (২৭) দ্বয়কে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত ০৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলা হেফাজতে আসামীদ্বয়কে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামী কহিনুর আক্তার স্বীকার করে যে, তার প্রতিবেশী মোঃ হামজা প্রঃ হানজালার সাথেও কোহিনুর আক্তারের ৩ বছর যাবৎ গোপনে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ও দৈহিক মেলামেশা ছিলো। এদিকে আসামী কহিনুর আক্তারের সাথে খালেকের পরকিয়া ও অবৈধ মেলামেশার বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম দিদার আলম তার স্ত্রী কহিনুর আক্তারকে প্রায়শই শারীরিক নির্যাতন করতো, যা একপর্যায়ে কহিনুর আক্তার তার দীর্ঘদিনের পরকিয়া প্রেমিক মোঃ হানজালাকে জানায়। হানজালা ভিকটিমকে হত্যা করে তাকে বিয়ের জন্য কহিনুর আক্তারকে পরামর্শ দেয় এবং হানজালা ও কহিনুর আকতার ভিকটিম দিদার আলমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম দিদার আলমকে হত্যার কাজে ব্যবহারের জন্য হানজালা কহিনুর আক্তারকে ৪/৫টি ঘুমের ঔষধ কিনে দেয়। গত ৩০/০৬/২০২৫ ইং তারিখ দিবাগত রাতে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিলো। রাত অনুমান ১০:০০ ঘটিকার সময় কহিনুর আক্তার দিদার আলমকে গরুর দুধের সাথে হানজালা কতৃর্ক সরবরাহকৃত ৪টি ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ঐ দুধ খাওয়ালে কিছুক্ষনের মধ্যে ভিকটিম দিদার আলম গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। রাত অনুমান ২:০০ ঘটিকার সময় আসামী কহিনুর আক্তার দিদার আলমের বুকের উপর বসে নাকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে। ঐ সময় হানজালা (২৬) ও তার অপর সহযোগি মোঃ সেলিম (২৮) ভিকটিম দিদার আলমের বাড়ির পার্শ্ববর্তী পশ্চিম কোদালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে বসে লুডু (ছক্কা) খেলছিলো এবং বিষয়টি আসামী কহিনুর আক্তার জানতো। হত্যার পর কহিনুর আক্তার মাথায় ছাতা ও হাতে টর্চ লাইট নিয়ে হানজালার কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালে হানজালা ও সেলিম ঘটনাস্থল ভিকটিম দিদার আলমের বাসায় এসে হানজালা ও তার সহযোগি মোঃ সেলিম মিলে দিদার এর মৃতদেহ ধান শুকানোর প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে পাশ^বর্তী কোদালা খালে লাশ ফেলে দেয়। ঐদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি হওয়ায় খালের পানির প্রচন্ড রাতে লাশ ভেসে যায়। আসামী কহিনুর আক্তারকে গত ০৯/১০/২০২৫ ইং তারিখ বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে সে তার দীর্ঘদিনের পরকিয়া প্রেমিক আসামী হানজালার পরামর্শে ও অপর আসামী মোঃ সেলিমের সহযোগিতায় দিদার আলমকে হত্যা করে লাশ গুম করার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ননা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বিজ্ঞ আদালতে আসামী কহিনুর আক্তারের প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডে জড়িত অপর দুই আসামী ১। মোঃ হামজা প্রঃ হানজালা ও ২। মোঃ সেলিমদ্বয়কে রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পশ্চিম কোদালা গ্রামস্থ তাদের নিজ বাড়ী হতে গত ১১/১০/২০২৫ ইং তারিখ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর আসামীদ্বয়কে পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলা হেফাজতে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারাও মামলার ঘটনায় জড়িত থাকা এবং মৃতদেহ কোদালা খালে ফেলে দেওয়ার বিষয়সহ বিস্তারিত ঘটনা স্বীকার করে। গত ১১/১১/২০২৫ ইং তারিখ তাদের বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে তারাও উক্ত হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আসামীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়।
ভিকটিম দিদার আলমের মৃতদেহ উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।