স্টাফ রিপোর্টার ।। পাবনা জেলা বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে স্থবিরতা চলছে। সাত বছর পেরিয়েও জেলা আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। তৃণমূলের ক্ষোভ–অসন্তোষে সাংগঠনিক সক্ষমতা ভেঙে পড়েছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি তিন মাসের জন্য ৪৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। আহ্বায়ক হন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব এবং সদস্য সচিব হন সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক। দায়িত্ব ছিল দ্রুত ৯ উপজেলা ও ৯ পৌরসভায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা। কিন্তু তা আর হয়নি।
পরবর্তীতে ২০২২ সালে কয়েক দফা কমিটি ঘোষণা হলেও পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিও ব্যর্থ হয়। অভিযোগ ওঠে—অর্থবাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও পদবাণিজ্য হিড়িকের কারণে ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন।
২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পাঁচ উপজেলা ও চার পৌরসভায় নতুন কমিটি গঠিত হলেও পরে সেগুলো বাতিল করা হয়। এ সময় ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া, সাঁথিয়ায় নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হলেও তা নিয়েও তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। জেলা সদরেও ঘোষিত নতুন কমিটি কয়েক দিনের মাথায় স্থগিত হয়ে যায়।
ফলে বর্তমানে প্রায় সব শাখায় কার্যত “কমিটি শূন্য” পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অঙ্গসংগঠনও নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে। এতে তরুণ কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন, অনেকে অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন।
দলীয় বিভাজন ও গ্রুপিংয়ের কারণে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সুজানগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। ঈশ্বরদীতে আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
নেতৃত্বহীনতায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেকে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
একজন নেতা বলেন, “শহর থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত গ্রুপিং ছাড়া কিছু নেই। আমরা আগামী নির্বাচনে কার হয়ে কাজ করব, সেটাও স্পষ্ট নয়।”
সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু অভিযোগ করেন, “একজন ব্যর্থ নেতাকে নিয়েই বারবার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে দল বিভক্ত হয়েছে।”
অন্যদিকে, জেলা আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আন্তরিকতার ঘাটতি ও বিভাজনের কারণে সমস্যা হয়েছে। ধীরে ধীরে সব পর্যায়ে কমিটি দেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত পূর্ণাঙ্গ শক্তিশালী কমিটি গঠন না হলে পাবনা জেলা বিএনপি শুধু সাংগঠনিক নয়, অস্তিত্ব সংকটেও পড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বন্দ্ব দূর করে ঐক্যবদ্ধ না হলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।