পাকশীতে স্কুল ছাত্রীকে অপহরনের চেষ্টা ব্যার্থ
স্টাফ রিপোর্টার।। শিক্ষার্থীদের আর্তচিৎকার ও অটো চালকের সাহসী ভূমিকায় অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পেল ৯ম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী। আজ (বুধবার) দুপুরে ঈশ্বরদীর পাকশী রেলওয়ে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
তবে এঘটনায় অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করে ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীর বাবা ও এজাহারে স্বাক্ষী হওয়ায় ৯ম শ্রেনীর অপর ছাত্রীর পরিবারকে হুকমি, ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বকাটে ছেলের সুযোগ্য বাবা ইউপি সদস্য ( মেম্বার) মো. মনোয়ার হোসেন লিটন। এতে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীসহ তার বান্ধবী এবং তাদের পরিবার।
অপহরণের চেষ্টাকারী বখাটিরা হলো উপজেলার পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার পাকশী ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন লিটনের ছেলে নাইম হোসেন (১৫) ও একই এলাকার আসাদুল ইসলামের ছেলে তন্ময় (১৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী অটোরিক্সা চালক জামাল হোসেন বলেন, ঘটনার সময় দুপুর একটার দিকে লিটন মেম্বারের ছেলে নাইম ও তার বন্ধু তন্ময় পাকশী বাজার তার অটো রিক্সায় উঠে গালর্স স্কুলের সামনে আসে। এর কিছুক্ষণ পরে পরীক্ষা শেষ করে স্কুলের পকেট গেট দিয়ে মেয়েরা বের হয়। এরমধ্যে থেকে ভুক্তভোগি মেয়েকে জোর করে টেনে হিচড়ে অটোর মধ্যে তুলে অপহরণের চেষ্টা করে। এই সময় মেয়েটি চিৎকার শুরু করে। তখন তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে অপহরণকারীদের বাধা প্রদান করেন। একই সঙ্গে ভুক্তভোগি ওই মেয়েসহ তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য মেয়েরা চিৎকার শুরু করে। এতে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসলে ওই দুই বকাটে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীসহ তার ৬-৭জন বান্ধবীরা অভিযোগ করে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে লিটন মেম্বারের ছেলে নাইম তার বন্ধুদের নিয়ে তাদের উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। তাদের এক বান্ধবীর ছবি বিভিন্ন স্থান থেকে জোগাড় করে বকাটে নাইম এডিট করে সঙ্গে যুক্ত করে মোবাইলে টিকটক হিসেবে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি জানার পর তারাসহ তাদের পরিবার লিটন মেম্বারের নিকট বারংবার অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে লিটন মেম্বার প্রভাবশালী হওয়ায় কোন প্রতিকারও পায়নি। শিক্ষার্থীসহ তাদের পরিবারের দাবী তারা রেলওয়ে, ইপজেড ও রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে চাকরীর সুবাদে দূরদূরান্ত থেকে এসে পাকশীতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। আর লিটন মেম্বার স্থানীয় লোক হওয়ায় ভয়ে তারা বেশি কিছু বলার সাহস করতো না।
স্থানীয়রা জানান, যেমন বাবা তেমন ছেলে। মাত্র কিছুদিন পুর্বে মনোয়ার হোসেন লিটন মেম্বার অন্য এক মহিলাকে ভাগিয়ে এনে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেছে। আর কিছুদিন পরই তার ছেলে নাইম স্কুলের এক মেধাবী শিক্ষার্থীকে অপহরণের চেষ্টা করলো। তাদের দাবী, মেম্বারের ছেলে উঠতি বয়সি কিশোর হলেও মেম্বার বাবার মদদে পাকশীতে নানা রকম অপরাধমুলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলো।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীটি ৯ম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের খুবই মেধাবী। ক্লাশে তার রোল-২। সবার প্রিয় শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ চেষ্টার বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। তাদের পরামর্শে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
পাকশী ইপিজেড ফাঁড়ির সহকারী পরিদর্শক (এসআই) মো. মুকুল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এই বিষয়ে ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। অপহরণের চেষ্টাকারী দুইজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে থানায় এজাহার দায়েরের পর থেকেই অপহরণের চেষ্টাকারী নাইমের বাবা ইউপি মেম্বার মনোয়ার হোসেন লিটন মেম্বার ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীসহ এজাহারে স্বাক্ষী হওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি প্রদর্শন করার সত্যতা পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে অপহরণের চেষ্টাকারী বকাটে নাইমের বাবা পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার মনোয়ার হোসেন লিটনের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।