পদ্মা নদীর ব্যাপক চরাঞ্চল জুড়ে অপরাধ দমনে শুরু হলো ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি।।
এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদীর ব্যাপক চরাঞ্চল জুড়ে সাম্প্রতিককালে শুরু হওয়া সন্ত্রাসের রামরাজত্ব ধ্বংসে অবশেষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একাট্টা হয়ে নেমে পড়েছে অপরাধ দমনে।
কাকন বাহিনী নামে একটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পাবনার ঈশ্বরদী, আমিনপুর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ইতিমধ্যে তাদের আক্রমণে একাধিক প্রাণহীনর ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন একাট্টা হয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চর এলাকা থেকে রবিবার ভোর ৪টা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে অপারেশন ফার্স্ট লাইট শুরু করেছে। এই অভিযান একটানা চলবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ— কাকন বাহিনী বিগত কয়েক বছর ধরে চরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায়, বালু লুট এবং কৃষকদের ফসল লুট করে আসছে। তাদের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে যখন তখন বন্দুক উঁচিয়ে গুলি চালানো তাদের সহজাত প্রবৃত্তি। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর’২৫ পদ্মার চরে পাকা ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কাকন বাহিনীর গুলিতে তিন কৃষক নিহত হন। এই হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড জনমনে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয়েছে কঠোর অভিযান।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার সরকার জানিয়েছেন, অভিযানে এখন পর্যন্ত চরের বিভিন্ন ঝোপঝাড় ও পরিত্যক্ত ঘাঁটি থেকে দুটি শুটারগান, চাইনিজ কুড়াল, বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযান শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।”
এদিকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এখন পর্যন্ত ৫টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, অসংখ্য দেশীয় অস্ত্র, মাদক ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। কাকন বাহিনীর ২১ জন সদস্যকে এপর্যন্ত আটক করা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’-এ পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএনসহ বিভিন্ন ইউনিটের মোট ১২’শ সদস্য অংশগ্রহণ করছে। চরে বৈরী ভৌগোলিক পরিবেশ, চরাঞ্চলের পথঘাট ও নদীর প্রবাহ— সব মিলিয়ে অভিযানকে চ্যালেঞ্জিং মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
চরে বসবাসকারী সাধারণ কৃষক ও জেলেরা এ অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন— “বছরের পর বছর আমরা আতঙ্কে ছিলাম। মাঠে ফসল তুলতেও ভয় লাগত। এই অভিযান যদি সম্পন্ন হয়, তবে আমাদের বেঁচে থাকার রাস্তা খুলবে।”
অন্যদিকে স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, অভিযান শেষে যেন পুনরায় কাকন বাহিনী মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে। এজন্য তারা স্থায়ী নিরাপত্তা ও চর এলাকায় নিয়মিত টহল ব্যবস্থা প্রত্যাশা করছেন।
এদিকে বহুল আলোচিত কাকন বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের এই অভিযানকে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগের’ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী চরাঞ্চলের মানুষ এখন আশাবাদী হয়ে তাকিয়ে আছে অপারেশন ফার্স্ট লাইটের দিকে। তাদের মনে প্রশ্ন এই সাঁড়াশি অভিযান সন্ত্রাসের শেকড় উপড়ে দেবে নাকি আবার পুনরায় পুরোনো ঘটনার নতুন করে পুনরাবৃত্তি ঘটবে?
প্রেরকঃ এস এম রাজা
ঈশ্বরদী, পাবনা।