জুয়ার আসরে মগ্ন ছাত্র সমাজ, অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ
সাইফ মুনতাসির:- আজ রেট কত?? কে কত ভাউ দিচ্ছে?? ক্লাসিক নাকি হেড টু হেড??
কি, বুঝতে পারছেন না তো? হ্যা এই কথাগুলোই শোনা যায় আজকাল তরুন ছাত্রদের মুখে। এগুলা কোন সাধারণ কথা নয়। এগুলা জুয়ার বাজি নিয়ে কথা। আগে মানুষ তাস দিয়ে জুয়া খেলতো,যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে জুয়া খেলাও পরিবর্তিত হয়েছে। আজকাল কেউ বনে জঙ্গলে জুয়ার আসর বসায় না, বিভিন্ন গ্রামের মোড়ে মোড়ে জুয়া খেলা হয়। হ্যা, এই জুয়াটা খেলা হয় আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বিভিন্ন ক্রিকেট এবং ফুটবল ম্যাচ নিয়ে। বিশ্বকাপ,বিভিন্ন লীগ,কাউন্টি,ডোমেস্টিক ক্রিকেট আরো বাদ যাচ্ছে না মহিলাদের ফুটবল ক্রিকেট ম্যাচ ও। একশত অথবা দুইশত টাকা নয়,এই খেলা হয় একহাজার থেকে একলক্ষ টাকা পর্যন্ত। এত টাকা ছাত্ররা কোথায় পাই?? এই প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন- আমি অনেকদিন ধরেই জুয়া খেলি। জুয়া আমার নেশায় পরিনত হয়েছে। প্রথমে অল্প টাকা করে খেলতাম এবং জিততাম,আস্তে আস্তে বেশি টাকা করে খেলা শুরু করি এবং এক পর্যায়ে আমার হার হয়। এবং অনেকের কাছে টাকা ধার নেওয়া শুরু করি। শেষ পর্যন্ত ছাগল বিক্রি করে এবং লিচু বাগান বিক্রি থেকে টাকা নিয়ে ঋন শোধ করি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্র বলেন-জুয়া খেলা জানাজানি হওয়ার কারণে আমার বাড়িতে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমি অনেক টাকা ঋনী হয়ে গেছি।
এরকম বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়। ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এরকম জুয়া খেলা হয়ে থাকে যার সিংহভাগ সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ এবং ঈশ্বরদী সরকারী কলেজে অনার্স পড়ুয়া ছাত্র। তাছাড়া বিভিন্ন কলেজের অনার্স ও ডিগ্রি পড়ুয়া ছাত্ররাও আছে তালিকায়। বিভিন্ন সময় দেখা যায় কলেজে পড়ুয়া ইন্টার মিডিয়েটে অধ্যায়নরত ছাত্ররাও আছে। টিভিতে সরাসরি কোন ম্যাচ শুরু হলেই খেলা দেখার ভিড় লেগে যায় বিভিন্ন দোকানে। শুধু হার জিত নিয়েই বাজি হয় না, কে কত রান করবে,এক ওভারে কত রান হবে,কোন ব্যাটসম্যান কিভাবে আউট হবে,পাওয়ারপ্লেতে কত রান হবে। ফুটবলে কে কয়টা গোল করবে আরো বিভিন্ন উপায়ে হয় জুয়া খেলা।
কিছুদিন প্রশাসন জুয়ার বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিলেও ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে এই জুয়ার সিন্ডিকেট। কারণ এরা সাধারনত বাজি লাগায় মোবাইলে এবং সতর্কভাবে। আর এভাবেই অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে এই অপার সম্ভাবনাময় তরুন ছাত্রসমাজ। আর এই জুয়ার ফলে বিভিন্ন জায়গায় শোনা যায় চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপকর্মের কথা। এভাবেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ছাত্রসমাজ। শুধু ঈশ্বরদীর বিভিন্ন মোড় নয়,আজ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে জুয়ার এই চিত্র দেখা যায়। যা ধ্বংস করছে হাকজার হাজার ছাত্রের ভবিষ্যৎ।