ঢাকা অফিস।।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কোভিড সুনামি পৃথিবীকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। শুধু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নয় শিক্ষা, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে। মানুষের জীবন ব্যবস্থায় এর নিষ্ঠুর প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন দেশে দারিদ্রতা বাড়ছে। এই মহামারি আমরা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছি। এমন একটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি যার সম্পর্কে পৃথিবীর কারো জানা ছিল না। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আইসিইউ, বেড, টেস্ট ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। অধিক চাপের কারণে অনেকেই করোনায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তবে সঠিক নির্দেশনা মেনে না চললে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে করোনায় ব্যাক্তিগত ক্ষতির পাশাপাশি সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সভা কক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব মহামারিতে আক্রান্ত। ‘ফেয়ারার এন্ড হেলদি’র কথা বলা হলেও করোনা আমাদের বুঝিয়েছে বিশ্ব কতটুকু ফেয়ারর এন্ড হেলদি। শুধু কথায় নয়, এই সমতা এবং ন্যায় সব জায়গায় থাকতে হবে। সবার জন্য খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান, নিরাপত্তা এবং ভাল পরিবেশ নিশ্চিত হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সবার জন্য একই মানের থাকতে হবে। ধনী, গরিব সবাই যেন একই মানের ভাল সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এটা ন্যায় হবে। পৃথিবিটাকে আরও সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান করতে হলে ভেজালমুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। নিরাপদ পানির ব্যরস্থা করতে হবে। তবেই মানুষ নিরাপদ থাকবে।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সাফল্য প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। বাংলাদেশ অনেক আগেই পোলিও নির্মূল করেছে। দেশে অনেক হাসপাতাল তৈরি হয়েছে, একশটির বেশি মেডিকেল কলেজ হয়েছে, পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সারাদেশে দেড় লাখ হাসপাতাল শয্যা রয়েছে। শিশমৃত্যু-মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। তবে ‘কোয়ালিটি অব হেলথ’ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে জনবল স্বল্পতা রয়েছে, সেটা বাড়াতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব অনেক কম হচ্ছে, সেটিও বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করেছি। আগে দিনে দেড়শ পরীক্ষা হতো, এখন ৩৫ হাজার পরীক্ষা হচ্ছে। কোভিড রোগীদের সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। তারপরেও কোভিড নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হচ্ছে না। কোভিডের কারণে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আগামীতে এই দূরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রধানমন্ত্রী ১৮ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তাহলে কোভিডকে তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবো। কিন্তু বেপরোয়া হয়ে যাওয়া করোনার সংক্রমণের হার দুই শতাংশ থেকে ২৪ শতংশে উন্নিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে আজ যেটা করবো কাল সেটার ফল পাবো।
সভায় উপস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিকে উদ্দেশ্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, একটা সাম্যের পৃথিবী গড়ে তুলতে টিকার সমান বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো সাম্যের পৃথিবী গড়ে তোলা বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।
সভায় যোগ দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, এইভাবে চলতে থাকলে শুধু হাসপাতাল বাড়িয়ে করোনা সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মন্ত্রনালয়ের নবনিযুক্ত সচিব (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ) লোকামন হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় সভায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রন) প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত হয়ে ও সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আলী ন‚র, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, অদিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা, প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রমুখ।
বিএসএমএমইউ
গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মহামারীকে মোকাবিলা করতে হবে। প্রতিরোধের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়াসহ অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সরকার ইতিমধ্যে মহাখালীর আইসোলেশন সেন্টারকে আইসিইউসহ ৯ শত শয্যার হাসপাতাল করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের নিরাপত্তায় করোনার ভ্যাকসিন এনেছেন। ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা, ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম প্রদানের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সকলে মিলেমিশে করোনা মুক্ত বিশ্ব, অসমতা বিহীন মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। এটাই হোক বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার। দেশে মানুষের মাঝে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যু, পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় জনগণকে অবশ্যই আরো সচেতন হতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবাকার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যায়ের বর্তমান প্রশাসন কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাধারণ ১০০টি শয্যা, ২০টি কেবিন এবং ১০টি আইসিইউ শয্যা নতুন করে সংযোজন করেছে। ভিসি তার বক্তব্যে