ঃমন ও মানুষঃ
দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষিতে আজ ২০/১০/২০২১ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার প্রথম কলামের উপর নীচে প্রকাশিত তিনটি খবর আমার কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে।
এক নম্বরে ‘আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)’ তার নীচে ‘ আজ লক্ষ্মী পূজা ‘ সবশেষে ‘ প্রবারণা পূর্ণিমা আজ’।অর্থাৎ বাংলাদেশের তিনটি প্রধান ধর্মের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান একই দিনে পালিত হচ্ছে।
প্রথমটি প্রিয় নবী (সঃ) এর জন্মদিন। বিনয়,সহিষ্ণুতা, দয়া,সহমর্মিতাসহ সকল মানবিক সদগুনের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটেছিল তার মাঝে। শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী হিসাবে তিনি ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সর্বকালে সর্বজন স্বীকৃত।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দ্বিতীয়জন আধ্যাত্মিক ও পার্থিব উন্নতি, আলো,জ্ঞান, সৌভাগ্য, উর্বরতা, দানশীলতা,সাহস ও সৌন্দর্যের দেবী।
তৃতীয়টি আষাঢ় মাসে পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিন মাসের জন্য বর্ষা বাস শুরু করেন।আজ তা শেষ হবে। এজন্য বৌদ্ধ মন্দিরগুলিতে বুদ্ধ পূজা, সংঘদান,পিণ্ডদান,শীল গ্রহণ ইত্যাদি আচার পালিত হচ্ছে।
এখানে ধর্মীয় শান্তি সম্প্রীতি বা ভ্রাতৃত্বের কোন সংঘাত নেই। এ যেন মিক্সড গেজ রেল লাইনের মত তিন ধারা সমান্তরালে নির্বিঘ্নে চলছে।
পত্রিকাটির প্রচ্ছদে তবে কেন ধর্মীয় উন্মাদনার আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের ছাই এ-র গাদার পাশে বসে কাঁদছেন মাঝি পাড়ার এক মা?
দৃশ্যটায় কেঁপে ওঠা সভ্যতা যেন খামছে ধরে মনুষ্যত্বের ভিত।
এই কান্নার নেপথ্য নায়ক অদ্ভুত এক বুক – ফেসবুক। এখানে কারো ব্যক্তিগত মতামতে গা জ্বলে শক্তিমানদের আর দুর্বলের জ্বলে আগুন।
সবাই জানে ভাইরাল হওয়া বিষয়গুলো ভাইরাসের মতোই দুর্বল কিন্তু ক্ষতিকর। তারপরও মানুষ এর ভিত্তিতে এমন কিছু করে বসে যাতে ভুলুন্ঠিত হয় মানবিক বোধ, বিশ্বাস, মর্যাদা আর ধর্মীয় রীতিনীতি।
সংঘটিত কোন বিষয়ে দোষারোপের পর কেউ যদি তা অস্বীকার করে তবে সেখানে দুটো বিষয় উপস্থিত থাকে। হয়তো সে করেছে কিংবা করে নাই। কিন্তু যদি বলা হয়, আমি নই-সে করেছে তখন একটি বিষয়ই সবার চোখে ভাসে – ডালমে কুছ কালা হ্যায়।
দরিদ্র জেলে পাড়ায় এখন দামী গাড়ীতে চড়ে অনেক নামীদামী মানুষের আনাগোনা হবে।সাথে আসবে নানা পদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সামগ্রী। আশ্বাস আর কথার তুবড়িতে আড়াল হয়ে যাবে ঘরপোড়া মানুষের হাহাকার আর মাঝিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধা জয়ন্ত রানী জলভরা চোখে অবাক বিস্ময়ে খুঁজে ফিরবে চেনা মানুষের অপরিচিত মুখগুলোর তাণ্ডবের মাঝে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস।