ঈশ্বরদীতে সবুজ পাতার ফাঁকে লিচুর সোনালি মুকুল
স্বপন কুমার কুন্ডু।।
ঈশ্বরদীতে সবুজ পাতার ফাঁকে লিচুর সোনালি মুকুল
লিচুর রাজধানীখ্যাত ঈশ্বরদীতে এবার লিচুগাছে পরিপূর্ণভাবে মুকুল এসেছে। থোকায় থোকায় লিচুর মুকুল দেখে ভালো ফলনের আশা করছেন চাষিরা। তারা বলছেন, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এমন মুকুল দেখা যায়নি। বাগানের প্রায় প্রতিটি গাছেই ঝুলছে থোকা থোকা লিচুর মুকুল। মুকুল আসেনি, এমন গাছের সংখ্যা অতি নগণ্য। জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূল এবং দোআঁশযুক্ত উর্বর মাটির কারণে ঈশ্বরদী কৃষিতে সমৃদ্ধ। উপজেলার অধিকাংশ মানুষ এখন লিচু চাষের দিকে ঝুঁকেছে। ফাগুনের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে লিচুর মুকুল আসতে শুরু করে। ফাগুনের শেষে লিচুর সোনারঙা মুকুল ফোটে। চৈত্রের শুরুতে ফুলগুলো কুঁড়িতে রূপ ধারণ করে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জ্যৈষ্ঠমাসের শুরুতে গাছে গাছে লাল টকটকে লিচুর দেখা মিলবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে। ছোট-বড় সব মিলিয়ে মোট ১১ হাজার ২৭০টি লিচুর বাগান রয়েছে। প্রধানত ৩ জাতের লিচুর চাষ হয়। এর মধ্যে মোজাফ্ফর বা দেশি, বোম্বাই ও চায়না-৩ অন্যতম। বর্তমানে স্বল্পসংখ্যক কদমি, কাঁঠালি, বেদানা, চায়না-১ এবং চায়না-২ জাতের লিচুর চাষও হচ্ছে। তবে, চায়না-৩ লিচুর স্বাদ ভালো এবং বেশি মিষ্টি হওয়ায় এ জাতের লিচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে। উপজেলার মাথাল পাড়া, চরমিরকামারী, নওদাপাড়া, জয়নগর, রূপপুর, ভাড়ইমারী, শেখের দাইড়, বক্তারপুর, মুন্নার মোড়, জগন্নাথপুর, কদিমপাড়া, মানিকনগর, সিলিমপুর, সাহাপুর, আওতাপাড়াসহ সব এলাকায় লিচুবাগান ও গাছ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানসহ প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় থাকা গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচুর মুকুল। মুকুলের ভার সইতে না পেরে অনেক গাছের ডাল হেলে পড়েছে। বাড়তি চাপে হেলে পড়া ডালগুলোকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে শক্ত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গাছের গোড়ায় ড্রেন করা, পানি দেওয়া, স্প্রে করাসহ লিচুগাছের পরিচর্যা শুরু হয়ে গেছে। কয়েক দিন পর ফুল ফোটে, পরে তা থেকে লিচুর গুটি বের হবে। তখন কীটনাশকসহ বিভিন্ন ভিটামিন স্প্রে করবে কৃষকরা। এছাড়াও লিচু মোটাজাতকরণে মাটিতে জৈবসার, হরমোনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে।
লিচুচাষিরা জানান, এ বছরে লিচুর মুকুল আসার সময় হালকা বৃষ্টি হওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ মুকুল বের হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব মুকুল ফুটতে শুরু করবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর লিচুর ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বক্তারপুরের লিচুচাষি হানিফ শেখ জানান, বিগত কয়েক বছর লিচুগাছে তেমন মুকুল আসেনি। কিন্তু এবার গাছে যে হারে মুকুল এসেছে, তাতে আমার বাগানেই লিচুর রেকর্ড ফলন হবে। লিচুতে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল ওরফে লিচু কিতাব জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর ভালো ফলন হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৭০০ কোটি টাকার লিচু কেনা-বেচা হবে ঈশ্বরদীতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ফাগুনের শুরু থেকে লিচুর মুকুল বের হতে শুরু করেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর ফলন বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতি বছরই লিচুগাছে মুকুল আসার আগে ও পরে রোগবালাই দমন ও পরিচর্যা সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। এবারও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সর্বক্ষণ পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাবে বলেও জানান তিনি।