ঈশ্বরদীতে শিশু ছাত্রকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
——
স্টাফ রিপোর্টার।। ঈশ্বরদীতে শিশু ছাত্র রাফসানকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করায় শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত ২৩ মে’২৪ ঈশ্বরদী পৌর শহরের দরিনারিচা রহমান কলোনীতে এই বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটে।
শিশু ছাত্র রাফসান ঈশ্বরদী পৌর এলাকার শহীদ আমীন পাড়ার রাকিবুল ইসলাম রকিবের ছেলে এবং সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
রাফসানের বাবা রকিবুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদার ও খণ্ডকালীন শিক্ষক উত্তম কুমার দাস পৌর শহরের রহমান কলোনীতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টার খুলেছেন। ওইদিন সকালে কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়ার সময় শিক্ষক উত্তম কুমার শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আজ আমার মাথা ঠিক নেই, কথা বললে মার দিবো।’ এসময় রাফসান বলে, আপনিতো স্যার সবসময় মারেন। এখনতো আপনার বেত ভাঙা। কী দিয়ে মারবেন?
রাফসানের এ কথা শোনার পর শিক্ষক উত্তম কুমার রেগে গিয়ে সব শিক্ষার্থীকে বলেন, আজ তোদের একটি ম্যাজিক দেখাবো। এ কথা বলেই ঘরের ভেতর থেকে বেত বের করে এনে রাফসানকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। এ সময় রাফসান বেঞ্চ থেকে পড়ে গেলে সেখানেও পেটাতে পেটাতে রক্তাক্ত জখম করেন। এক পর্যায়ে রাফসান অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে নিচ থেকে তুলে বেঞ্চে শুইয়ে দেন। জ্ঞান ফেরার পর রাফসান বাড়িতে এলে তার শরীর রক্তাক্ত জখম দেখে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদার অভিভাবকদের বিভিন্ন সময় বলেন, আপনাদের সন্তানদের উত্তম কুমারের কাছে প্রাইভেট পড়তে দিন। সে ভালো পড়াতে পারে। তার কাছে প্রাইভেট পড়লে ফলাফল ভালো করবে। প্রধান শিক্ষকের কথামতো সেখানে প্রাইভেট পড়তে দিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষক আত্মীয়তার সুবাদে অবৈধভাবে উত্তম কুমারকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। ঈশ্বরদী উপজেলার অন্য কোনো সরকারি স্কুলে এ ধরনের খণ্ডকালীন শিক্ষক নেই।
রাফসানের মা ফরিদা পারভীন জানান, ওইদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর রাফসানের জামা খুলে দেখি, বেতের আঘাতে পিঠ রক্তাক্ত হয়ে গেছে। তাকে তাৎক্ষণিক ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসা করায়। তিনি অভিযোগ করেন যে, প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার আর উত্তম কুমার একসঙ্গে কোচিং সেন্টার খুলেছেন। এর আগেই প্রধান শিক্ষককে আমি বলেছিলাম স্যার আমার ছেলেটি একটু অসুস্থ্য ও মেধা শক্তি কম। তার দিকে খেয়াল রাখবেন। স্যার বলেছিলেন, ‘মেধা নেই পড়ানোর দরকার কী? অন্যকাজে লাগিয়ে দিতে হবে।’
এব্যাপারে কথা বলার জন্য ঈশ্বরদী সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। খণ্ডকালীন শিক্ষক উত্তম কুমারের মোবাইলও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঈশ্বরদী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার জহুরুল ইসলাম বলেন, একদিন সাউথ স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে ওই শিক্ষককে পাই। তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কে? স্কুলে কী? তখন তিনি বলেন যে, শখ করে ক্লাস নিচ্ছি। আমি তাকে তাৎক্ষণিক ক্লাস থেকে বের করে দিই এবং আর কখনো যেন ক্লাস না নেয় সে ব্যাপারে নিষেধ করি। এমনকি প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, অনুমতি না নিয়েই ক্লাসে ঢুকেছে আর সে ফ্রীতে ক্লাস নেয়, সময় কাটায়। এ প্রেক্ষিতে সে যেন আর কখনো ক্লাসে না ঢোকে মর্মে আমি প্রধান শিক্ষককে হুশিয়ার করে দেই।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন কোন শিক্ষক নিয়োগের বিধান নেই। তাছাড়া এই স্কুলে শিক্ষকের কোনো শূন্যপদও নেই। সুতরাং খণ্ডকালীন শিক্ষকের এখানে কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। বিষয়টি একেবারেই স্বেচ্ছাচারীতার পর্যায়ে পড়ে।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, আহত শিশু ছাত্র রাফসানের বাবা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।